আ.লীগের বেশির ভাগ নেতাকে থাকতে হবে নির্বাচনের বাইরে নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (২৬ অক্টোবর) : কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত দল আওয়ামী লীগের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না। তবে নির্বাচনে দলটির অংশ নেওয়ার সুযোগ শেষ পর্যন্ত হলেও এর বেশির ভাগ নেতা-কর্মী প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য হচ্ছেন। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন (ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল-আইসিটি) ও গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধনের বেড়াজালে পড়ে তারা প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য হচ্ছেন। আইসিটি আইন ও আরপিওর সংশোধনীতে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কারও বিরুদ্ধে আইসিটিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল হলেই তিনি দেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য হবেন। গত এক বছরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের হাজারও নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আইসিটিতে অন্তত ৪৫০টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আসামির তালিকায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী, সেনাবাহিনীর সাবেক-বর্তমান কতিপয় কর্মকর্তা, পুলিশের সাবেক-বর্তমান কতিপয় কর্মকর্তা ও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী কতিপয় আমলার নাম রয়েছে। অভিযোগ যাচাইয়ের পর প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ৩০টি মামলা (মিস কেস) করা হয়েছে। মামলায় মোট আসামি ২০৯ জন। এর মধ্যে ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন কারাগার ও উপকারাগারে বন্দি আছেন। এ ছাড়া শেখ হাসিনাসহ অনেক আসামিই পলাতক আছেন। ৩০ মামলার মধ্যে এখনো ২০টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। অপর ১০টির তদন্ত শেষে ট্রাইব্যুনালে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এতে মোট আসামি ৯৪ জন। এর মধ্যে কারাবন্দি আছেন ২১ জন, পলাতক ৫৮ জন এবং অপর ১৫ জনকে বিশেষ হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। আইসিটির মামলায় আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে বেশির ভাগ নেতা হয় কারাগারে, না হয় পলাতক। আইসিটি আইনের বাইরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে হত্যার অভিযোগে মোট ৮৩৭টি মামলা রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫টি মামলার বিচারকাজ চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এ অবস্থায় ৭৯২টি মামলার দুই হাজারেরও বেশি আসামির বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হবে বলে ঘোষণা করেছে সরকার। এদের সিংহভাগই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। যদিও দ্রুত বিচার আদালতের ওই সব মামলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নয়। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্প্রতি সংশোধিত আইসিটি আইন এবং গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ। গত বৃহস্পতিবার গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) সংশোধনী উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক ও অভিযুক্তরা সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। পলাতক বলতে- যাদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এবং আত্মসমর্পণের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। একইভাবে গত ৮ অক্টোবর সংশোধিত আইসিটি আইনে বলা হয়েছে, আইসিটিতে দায়ের করা মামলায় যাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। যেহেতু মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আসামি হয়েছেন। অনেকেই কারাবন্দি বা পলাতক আছেন। এ অবস্থায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীকে নির্বাচনের বাইরেই থাকতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোতে শেখ হাসিনার পাশাপাশি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় সব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, উপদেষ্টা, এমপি ও দলের প্রভাবশালী নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি রয়েছে। প্রতিটি জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামে মামলা রয়েছে। উপজেলার ক্ষেত্রেও তাই। এ ছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নামে মামলা রয়েছে। অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি আছেন। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য- ১৪ দলের সমন্বয়ক ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক, কর্নেল ফারুক খান, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম। এ ছাড়া আরও কারাবন্দি আছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আহমদ হোসেন, বি এম মোজ্জাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, সদস্য মো. আনিসুর রহমান, দলের প্রভাবশালী নেতা- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং সাবেক এমপি হাজি মো. সেলিম ও তার ছেলে সোলায়মান সেলিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক সংসদ সদস্য শাহে আলম, সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ, সাবেক সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শায়ে আলম মুরাদসহ আরও অনেকে। পলাতক রয়েছেন যারা ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের বেশির ভাগই পলাতক রয়েছেন। এ ছাড়া সাবেক স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হেলাল ও তার ভাই শেখ সালাহ উদ্দিন ও ছেলে তন্ময় পালিয়েছেন। পলাতক আছেন- সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মো. তাজুল ইসলাম, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, মো. আব্দুস শহীদ, উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মো. ফরিদুল হক খান, মো. জিল্লুল হাকিম, নাজমুল হাসান। স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, ডা. সামন্ত লাল সেন, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, আব্দুস সালাম, বেগম সিমিন হোসেন (রিমি), নসরুল হামিদ, মো. মহিববুর রহমান, জাহিদ ফারুক, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রুমানা আলী, শফিকুর রহমান চৌধুরী, আহসানুল ইসলাম টিটু, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মোহাম্মদ এ আরাফাত। শীর্ষ নেতাদের মধ্যে পলাতক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম), অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, জেবুন্নেছা হক, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মাশরাফী বিন মুর্তজা, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন নাহার, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, তারানা হালিম, সানজিদা খানম। হত্যা মামলায় আসামি হলেও জামিনে আছেন সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও এম এ মান্নান। এদিকে আইসিটিতে বিচারকাজ শেষে রায় ঘোষণার অপেক্ষায় আছে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে করা মামলা। এ ছাড়া আনুষ্ঠানিক বিচার চলছে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাদরুদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী এবং কুষ্টিয়া সিটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা ইমরান চৌধুরী আকাশের বিরুদ্ধে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে অন্তত ১২ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মো. মনির হোসেন। নভেম্বরে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা হলে এই ১২ জনও নির্বাচনে অযোগ্য হবেন।
আ.লীগের বেশির ভাগ নেতাকে থাকতে হবে নির্বাচনের বাইরে নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (২৬ অক্টোবর) : কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত দল আওয়ামী লীগের
বিস্তারিত