এডিসি হারুনের অপকর্মে অসন্তোষ পুলিশ বাহিনীতে, ক্ষোভ সরকারে

মেহ্দী আজাদ মাসুম, বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩) : ঢাকা মহানগর পুলিশে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন রমনা বিভাগের এডিসি (প্রত্যাহারের পর এপিবিএনে বদলী) হারুন অর রশীদ। মানতেন না বাহিনীর শৃঙ্খলা। ক্ষমতার অপব্যাবহার করেছেন হরহামেশাই। কথার আগেই গায়ে হাত তুলতেন। যাকে তাকে পেটাতেন। পুলিশ, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, আইনজীবী, রাজনীতিক কেউই বাদ যাননি। নারীপ্রিতীও কম ছিলো না তার। এসব দেখেও শৃঙ্খল পুলিশ বাহিনীর হডকোয়ার্টার (সদর দপ্তর) ছিলো নিরব! নিষ্ক্রিয় ছিলো ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) হেডকোয়ার্টারও। এডিসি হারুনের অপকর্মে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে সরকারে। অসন্তোষ জানিয়েছেন পুলিশের একাধিক কর্মকর্ত। আর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, এডিসি হারুন যতটুকু অন্যায় করেছেন, ততটুকু শাস্তি পাবেন। অপরাধের ছাড় দেয়া হবে না।

আহত তিন ছাত্রলীগ নেতা ও বারডেম হাসপাতালের প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, মানুষ পেটানোতে অভ্যস্ত এডিসি হারুন গত ৯ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রাতে এক নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বারডেম হাসপাতালের চারতলায় আড্ডা দিচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের হাতেনাতে ধরেন ঔনারী পুলিশ কর্মকর্তার স্বামী সরকারী কর্মকর্তা (৩১তম বিসিএস) আজিজুল হক। এ সময় হারুনের সঙ্গে আজিজুল হকের বাগবিত-া হয়। আজিজুলের ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান। এর একটু পর এডিসি হারুন শাহাবাগ থানার পুলিশ ডেকে এনে শরীফ আহমেদ ও মাহবুবুর রহমানকে (আনোয়ার হোসেন ছাড়া) আটকে করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যান। ওসির কক্ষে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে তাদের ওপর চালানো হয় মধ্যযুগীয় নির্মম নির্যাতন।

ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রমনা বিভাগের ডিসি (উপ-কমিশনার) মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনকে শাহাবাগ থানায় মারধরের ঘটনাটি জানিয়ে থানায় যান। ওসির কক্ষে ঢুকে এডিসি হারুন ও ওসিকে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করতে দেখে আবারো ডিসি রমনাকে ফোন দিতে চেষ্টা করতেই এডিসি হারুন ও অন্য পুলিশ তাকে ধরে মাটিতে ফেলে মারধর শুরু করেন। আনোয়ার হোসেনের ভাষ্য, হারুনসহ প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন পুলিশ তার মুখে কিলঘুষি সেরে তাকে নিচে ফেলে পা দিয়ে লাথি মারতে থাকেন। পুলিশের অস্ত্র ও লাঠির আঘাতে ছাত্রলীগের এক নেতার সামনের বেশকয়েকটি দাত ভেঙ্গে যায়। এসময় তাদের অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে পাঠানো হয়। আজিজুল হকের স্ত্রীও ৩১তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতের এ ঘটনাটি পুলিশের পক্ষ থেকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হলেও রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গণমাধ্যমের অনুসন্ধান শুরু হয়। সংবাদটি গুরুত্বসহকারে সব নিউজ পোর্টাল ও টেলিভিশনের স্ক্রলে স্থান পায়।

‘নারী পুলিশ কর্মকর্তার সাথে হারুনের আড্ডা দেয়ার সময় নারীর স্বামীর (সরকারী কর্মকর্তা) হাতে ধরা পড়া এবং ঘটনাস্থল থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে শাহাবাগ থানায় তুলে এনে ভয়াবহ নির্যতন’ এর খবর ‘টক অব দ্যা টাউন’ এ পরিনত হয়। এডিসি হারুনের এই অপকর্ম ছড়িয়ে পড়লে টনক নড়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের। নড়েচড়ে ওঠে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) হেডকোয়ার্টারও। ডিএমপি হেডকোয়ার্টার আলোচিত-সমালোচিত হারুনকে রমনা বিভাগ থেকে প্রত্যাহার করে পিওএম’এ সংযুক্ত করে। এর কয়েকঘন্টার মধ্যেই পুলিশ হেডকোয়র্টার তাকে এপিবিএনে বদলী করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিধানে শৃঙ্খল পুলিশ বাহিনীর ঢাকা মহানগর পুলিশে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন রমনা বিভাগের এডিসি (প্রত্যাহারের পর এপিবিএনে বদলী) হারুন অর রশীদ। সহকর্মী পুলিশ সদস্য, সাংবাদিক, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী কেউ বাদ যাননি, সবাইকেই পিটিয়েছেন রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ। দাবি-দাওয়া নিয়ে শাহবাগ চত্বরে আন্দোলনকারী হলে তো কথাই নেই, এডিসি হারুনের হাত থেকে মাফ পেতেন না কেউই।

পুলিশ কর্মকর্তা হারুনের এমন আক্রমণাত্মক ও আপত্তিকর ‘অ্যাকশন’ অনেক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা পছন্দ করতেন না। পুলিশের ভেতরে তাকে নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনাও হয়েছে। বাইরেও বিভিন্ন সময় সমালোচনা হয়েছে তাকে নিয়ে; নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। তারপরও মানুষ পেটানোকে অভ্যাসে পরিণত করা হারুনের বিরুদ্ধে এর আগে কখনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি!

ঢাকা মহানগর পুলিশের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও পুলিশ বাহিনীর সনাম ক্ষুন্ন করা এডিসি হারুনের (প্রত্যাহার পূর্বক এপিবিএনে বদলী) অপ্রতিরোধ্য আচরণ ও উচ্ছুঙ্খলতায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে সরকারে। গতকাল সোমবার বিষয়টি নিয়ে সরকারের একাধিক কর্মকর্তাকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘পুলিশের একজন এডিসি কিভাবে সবার অগোচওে এমন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলেন! তার এতসব অপকর্ম কারোই চোখে পড়লো না। এাঁ মানা যায় না। এসব কর্মকর্তার জন্য সরকার তথা পুলিশ বাহিনীর অসংংখ্য সাফল্য কলুষিত হয়।’ হারুনের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন এই কর্মকর্তা।

শৃঙ্খল পুলিশ বাহিনীতে থেকে এডিসি হারুনের উশৃঙ্খলায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। একদিন আগে তিনি সংবাদিকদের বলেন, এডিসি হারুন যতটুকু অন্যায় করেছেন, ততটুকু শাস্তি পাবেন। অপরাধের ছাড় দেয়া হবে না।

রমনা বিভাগ থেকে প্রত্যাহারের পূর্বক এপিবিএনে বদলী করা হারুন অর রশীদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে অস্ত্র উচিয়ে লাঠি হতে পিটিয়েছেন পুলিশ, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, আইনজীবী, রাজনীতিকদের। নারীপ্রিতীও কম ছিলো না তার। হারুনের এনব কর্মেও তথ্যে ক্ষুব্ধ পুলিশ হডকোয়ার্টার (সদর দপ্তর)। নিরবতা ভেঙ্গে তার বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটিকে নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রোববার তাকে এপিবিএন’এ বদলী পূর্বক প্রজ্ঞাপন জারি করে হেডকোয়র্টার।

অপকর্মের নাটের গুরু এডিসি হারুনের বিষয়ে নিষ্ক্রিয়তা ভেঙ্গেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) হেডকোয়ার্টারও। রোববার দুপুরে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার হারুনকে রমনা বিভাগ থেকে প্রত্যাহার করে পিওএম’এ সংযুক্ত করে। এরপর পুলিশ সদর থেকে তাকে এপিবিএন’এ বদলী করা হয়।

হারুনের অপকর্মের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্মকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘তদন্তে দোষী প্রমানিত হলে অবশ্যই এডিসি হারুনকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।’

ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেনের বক্তব্য :
বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ঘটনার বিষয়ে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব আজিজুল হক তার এলাকার বড় ভাই। তাদের বাড়ি গাজীপুরে। আজিজুল শনিবার সন্ধ্যায় ফোন করে তাকে ঢাকার শাহবাগের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে যেতে বলেন। রাত আটটার দিকে আমি সেখানে যাই। পরে শুনি তিনি বারডেম জেনারেল হাসপাতালে আছেন। হাসপাতালের চারতলায় গিয়ে দেখি আজিজুল হক ও এডিসি হারুনের মধ্যে বাগবিত-া হচ্ছে। আমিসহ ছাত্রলীগের আরও দুই নেতা মিলে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি।’

আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, এডিসি হারুন ঘটনার একপর্যায়ে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলমকে ফোন করে হাসপাতালে ডেকে নেন। পুলিশ গিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে মারধর করে। পরে হাসপাতাল থেকে পুলিশ জোর করে আজিজুলসহ তিন–চারজনকে গাড়িতে থানায় নিয়ে যায়।

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি ফোনে রমনা বিভাগের উপকমিশনারকে (মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন) মারধরের ঘটনাটি জানিয়ে শাহবাগ থানায় যাই। গিয়ে দেখি ওসি তদন্তের কক্ষে সবাইকে আটকে রেখে এডিসি হারুন এবং ওসি মারধর করছেন। মারধর করতে দেখে আবারো ডিসি রমনাকে ফোন দিতে চেষ্টা করতেই এডিসি হারুন ও অন্য পুলিশ আমাকে ধরে মাটিতে ফেলে মারধর শুরু করেন। হারুনসহ প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন পুলিশ মুখে কিলঘুষি মেরে আমাকে নিচে ফেলে পা দিয়ে লাথি মারতে থাকেন। তাদের অস্ত্র ও লাঠির আঘাতে ছাত্রলীগের এক নেতার সামনের বেশকয়েকটি দাত ভেঙ্গে যায়। আমাদের অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে পাঠায়।’

যাাকে নিয়ে ঘটনার সুত্রপাত :
ঘটনার সুত্রপাত হয়েছিলো রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের স্ত্রীকে (ডিএমপিতে কর্মরত এডিসি) নিয়ে। আজিজুল হক জানতেন এডিসি হারুন তার স্ত্রীকে বিরক্ত করেন। কাজে-অকাজে দেখা সাক্ষাৎ করেন। ঘটনার দিন এডিসি হারুনকে তিনি হাতেনাতে ধরতে গিয়েছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির এই (এডিসি) নারী কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, তিনি চিকিৎসার জন্য বারডেম হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এডিসি হারুন সেখানে গিয়েছিলেন তার সহকর্মী হিসেবে। হাসপাতালটি তার আওতাধীন এলাকায় বলেই সেখানে যান তিনি। ‘কী হয়েছিল’ জানতে চাইলে ওই নারী কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনারা সবকিছু ইনফর্মড (জানেন)। তারপরও কেন জিজ্ঞেস করছেন।’

এডিসি হারুনের পেটানোর ‘সংস্কৃতি’ :
ক্ষমতার অপব্যাবহার করে কথার আগেই গায়ে হাত তুলতেন রমনা বিভাগ থেকে প্রত্যাহারের পর এপিবিএন’এ বদলী করা এডিসি হারুন। যাকে তাকে পেটাতেন তিনি। পুলিশ, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, আইনজীবী, রাজনীতিক কেউই বাদ যাননি। নারীপ্রিতীও কম ছিলো না তার।

চলতি বছরের ১৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের দিন পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। লাঠিচার্জে আহত হন এটিএন নিউজের রিপোর্টার জাবেদ আক্তার, আজকের পত্রিকার রিপোর্টার এস এম নূর মোহাম্মদ ও জাগো নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার ফজলুল হক মৃধাসহ দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমের অন্তত ১৫ জন সংবাদকর্মী। সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, সম্পূর্ণ অমানবিক প্রক্রিয়ায় মারধরের এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেন এডিসি হারুন।

ওই দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন সাংবাদিক জানান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত অডিটোরিয়ামে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তাদের অডিটোরিয়াম থেকে বের করে দেওয়ার জন্য সেখানে প্রবেশ করেন বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য। তারা সেখানে ঢুকেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ওপর লাঠিচার্জ করেন। এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ নিচ্ছিলেন সাংবাদিকরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অতর্কিতভাবে সাংবাদিকদের মারধর ও লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। এই আক্রমণে নেতৃত্ব দেন এবং অন্যদের অর্ডার করেন এডিসি হারুন।

গত বছরের ৭ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শাহবাগে একটি সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামি আবদুল্লাহ। পুলিশের লাঠিচার্জে তার মাথা ফেটে যায়। দিতে হয় ১৪টি সেলাই। ওই শিক্ষার্থী জানান, সেদিন ‘শান্তিপূর্ণ’ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ব্যাপক লাঠিপেটা করে পুলিশ। তিনিসহ অন্তত ১২ জন আহত হন। সেদিনের ঘটনাতেও নেতৃত্ব দেন রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ।

নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় নিজের সহকর্মীকেই চড় মেরে সমালোচিত হন এডিসি হারুন। সেসময় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের দিকে রাবার বুলেট ছুড়তে এক কনস্টেবলকে নির্দেশ দেন তিনি। ‘বুলেট শেষ হয়ে গেছে’ বলায় ওই কনস্টেবলকে চড় মারেন তিনি।

শাহবাগের একটি আন্দোলন কর্মসূচিতে এডিসি হারুন নিজে লাঠি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের পেটাচ্ছেন, এমন ভিডিও ফেসবুকে বেশ কয়েকবার ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারী সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এমন সময় এডিসি হারুন অর রশিদ ও তার অন্য সহকর্মীরা বিক্ষোভকারীদের পেটাতে শুরু করেন। পেটানো শুরুর আগে হারুনের গায়ে জ্যাকেট এবং মাথায় হেলমেট পরিয়ে দেন সহকর্মীরা। হেলমেট পরানোর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি প্রচ- মারমুখী হয়ে ওঠেন। সেদিন তিনি ও তার সহকর্মীরা বিক্ষোভকারীদের অমানুষিকভাবে লাঠিপেটা করেন।

গত বছরের ৪ মার্চ গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। ঢাকা ক্লাবের সামনে উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর অতর্কিত লাঠিচার্জ করে।

এছাড়া গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এডিসি হারুনের নেতৃত্বে পুলিশ ছাত্রদলের ‘শান্তিপূর্ণ’ সমাবেশে হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছিল।

২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে বিচার চেয়ে শাহবাগে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও অন্যান্য বাম সংগঠন আয়োজিত মশাল মিছিলেও তার নেতৃত্ব পুলিশ লাঠিপেটা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা :
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, পুলিশ পাবলিককে পেটাতে পারে না। যদি জান ও মালের ক্ষয়ক্ষতির হুমকি থাকে, পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পুলিশ শক্তিপ্রয়োগ করতে পারে। কিন্তু থানা হেফাজতে কাউকে নির্যাতন করা কিংবা পেটানো গুরুতর অপরাধ।

প্রত্যাহার আদৌ কোনো শাস্তি কি না– জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কোনো শাস্তি নয়, তবে শাস্তির প্রাথমিক ধাপ। কারণ, অভিযোগ উঠলেই কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তদন্ত করে বা অভিযোগ খতিয়ে দেখে তারপর শাস্তি নিশ্চিত করতে হয়। তদন্ত নিরপেক্ষ করতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

কারো ফোন ধরছেন না এডিসি হারুন :
ছাত্রলীগ নেতাদের পোটানোসহ অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে এডিসি হারুন অর রশিদকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। জানা গেছে, গণমাধ্যম কর্মীদের কারো ফোনই তিনি ধরছেন না।

Leave a Reply

Facebook
%d bloggers like this:
ব্রেকিং নিউজ