সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ কতটা শক্তিশালী?

ডেস্ক প্রতিবেদন, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (৭ এপ্রিল ২০২৪) : বান্দরবানের থানচি ও রুমায় ব্যাংকে দুর্র্ধষ ডাকাতি ও থানায় হামলার পর কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। এ ঘটনার পর থেকে একটি প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই সামনে চলে আসছে। কেএনএফ আসলে কতটা শক্তিশালী? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে।

বাংলাদেশ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করলেও সংগঠনটি তাদের ফেসবুক পাতায় দাবি করেছে, তারা কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন নয়।

কেএনএফ-এর দাবি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির অন্তত ৬টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা। যদিও দলবদ্ধভাবে তাদের বম হিসেবে প্রচার করছে অনেকে।

২০২২ সালের এপ্রিলে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করে ফেসবুকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলাগুলোর সমন্বয়ে পৃথক রাজ্য দাবি করে কেএনএফ। তখনই সাংগঠনিক প্রধান হিসেবে নাথান বমের নাম ঘোষণা করে তারা।

একই বছর পার্বত্য এলাকায় ‘জঙ্গি বিরোধী’ একটি সমন্বিত অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। তখন কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দিল শারক্বীয়া সদস্যদের দুর্গম পাহাড়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছিল। ওই অভিযানের পর কেএনএফ-এর সশস্ত্র তৎপরতা খুব একটা দৃশ্যমান ছিল না।

এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে বান্দরবানের রুমায় উপজেলা প্রশাসন কমপ্লেক্স ভবনে হামলা চালিয়ে সোনালী ব্যাংক থেকে অস্ত্র ও টাকা লুট করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ সময় তারা ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই ফের আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে কেএনএফ। এর পরদিন (বুধবার) দুপুরে থানচি বাজারে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালানো হয়।

দুই দিনের অভিযানের পর র‍্যাবের মধ্যস্থতায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর রুমা বাজারের পাশের এলাকা থেকে নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করা হয়।

কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে শুক্রবার থেকেই সাঁড়াশি অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে র‍্যাব। বাহিনীটি বলেছে, অভিযানে ‘পাহাড়ে জঙ্গি বিরোধী অভিযানের মতো সব ধরনের কৌশল’ প্রয়োগ করা হবে।

এদিকে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, থানচিতে প্রকাশ্য দিবালোকে বাজার ঘিরে দুটি ব্যাংকের শাখায় হামলাকারী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা থানারই দেড় থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করে থাকতে পারে বলে তারা মনে করছে।

কেএনএফ কতটা শক্তিশালী
বান্দরবানে এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেছেন, গত কয়েক দিনে ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনার দুটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে তারা মনে করেন। প্রথমত, টাকা লুট ও অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়া এবং দ্বিতীয়ত নিজেদের সক্ষমতা প্রদর্শন করা।

সক্ষমতা বলতে কেএনএফ-এর শক্তি বা সামর্থ্যের কথা বোঝানো হলে এই প্রশ্নও আসে যে, কেএনএফ প্রকৃত অর্থে কতটা শক্তিশালী।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কেএনএফ তাদের অস্ত্রের মজুত বাড়িয়েছে। শক্তি বৃদ্ধি করেছে তাদের সশস্ত্র শাখার। কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে তারা ধারাবাহিকভাবে হামলা করছে।

আগের তুলনায় ৩-৪ গুণ সদস্য বাড়িয়ে কেএনএফ এখন আরও দুর্র্ধষ। তাদের সক্রিয় নারী সদস্যরা ব্যাংক ডাকাতি ও থানচি থানায় হামলায় সরাসরি অংশ নেয়। সংগঠনটির সশস্ত্র শাখাকে চিহ্নিত করার জন্য একাধিক টিম গঠন করেছে পুলিশ।

রুমা ও থানচিতে হামলার ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ওই ঘটনার জন্য কেএনএফকে অভিযুক্ত করেছেন। তবে কেএনএফ এ বিষয়ে এখনও কোনো বক্তব্য দেয়নি।

কেএনএফ বা কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন’ হিসেবে বিবেচনা করছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী।

থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, তাদের ধারণা থানচিতে হামলাকারী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা থানার দেড়-দুই কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থান করছে।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে যা বুঝতে পারছি তাতে আমাদের মনে হয় আশেপাশের পাহাড়ে তারা আছে। তবে তাদের এমন কোনো শক্তি নেই যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হবে। একটা পরিস্থিতি হয়েছে সেটি মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বান্দরবানের শান্তি আলোচনা বিষয়ে কেএনএফ-এর বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ হয়েছিল তাদের কয়েকজন ধারণা দিয়েছেন, কেএনএফ-এর সামরিক শাখার সদস্য সংখ্যা সাড়ে তিনশ থেকে চারশর মতো হতে পারে।

Leave a Reply

Facebook
%d bloggers like this:
ব্রেকিং নিউজ