পাহাড় ধসে ৬ সেনাসহ নিহত ৩০

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসে সেনাবাহিনীর ছয়জন সদস্যসহ ৩০ জন নিহত হয়েছেন। নিখোঁজ হয়েছেন ১০ জন। গতকাল সোমবার রাত ও আজ মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলাসহ রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকা, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় পাহাড়ধসের এসব ঘটনা ঘটে।

পাহাড়ধসে রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকায় ১৭ জন, সদর উপজেলার সাতছড়ি ইউনিয়নের মানিকছড়ি এলাকায় ছয় সেনাসদস্য, বান্দরবানে চারজন ও চন্দনাইশ উপজেলায় (চট্টগ্রাম জেলা) তিনজন মারা গেছেন। সেনা ক্যাম্পধসে চট্টগ্রামের সঙ্গে রাঙামাটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

এ ছাড়া চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় দুই পরিবারের আটজন ও বান্দরবানের লেমুঝিরি জেলেপাড়ায় এক পরিবারের দুজন নিখোঁজ রয়েছেন। মৃত ব্যক্তির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর ৬ সদস্যসহ রাঙামাটিতে নিহত ২৩
রাঙামাটিতে সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসে ১৭ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে কাপ্তাই উপজেলার তিনজন ও কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের একজন রয়েছেন। মানিকছড়িতে পাহাড়ধসে সেনা ক্যাম্প ধসে পড়ে কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর ছয়জন মারা যান। মৃত ব্যক্তিদের পরিচয়ের ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

রাঙামাটি সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন শহীদ তালুকদার আজ বলেন, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পাহাড়ধসে প্রথমে নয়জনের মৃতদেহ হাসপাতালে আনা হয়। পরে আরও চারজনের মৃতদেহ আনা হয়।

কাপ্তাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ নুর জানান, কাপ্তাই উপজেলায় পাহাড়ধসে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জগদীশ চাকমা জানান, এই ইউনিয়নে পাহাড়ধসে মৃত একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক রাশেদুল হাসান জানান, পাহাড়ধসে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
বান্দরবানে তিন ভাইবোনসহ চারজন নিহত
আজ ভোররাত চারটার দিকে লেমুঝিরি আগাপাড়ায় পাহাড়ধসে ঘুমন্ত অবস্থায় তিন শিশু ভাইবোন মারা গেছে। জেলা শহরের কালাঘাটায় একটি বাসায় পাহাড়ধসের ঘটনায় ঘুমন্ত অবস্থায় এক কলেজছাত্র মারা গেছেন। লেমুঝিরি জেলেপাড়ায় পাহাড় ধসে নিখোঁজ রয়েছেন মা-মেয়ে। এ ছাড়া গুরুতর আহত অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বান্দরবান সদর ইউপির চেয়ারম্যান সাবুখয় মারমা জানান, ভোররাত চারটার দিকে লেমুঝিরি আগাপাড়ায় পাহাড়ধসে একই পরিবারের ঘুমন্ত তিন শিশু মাটি চাপা পড়ে মারা গেছে। তারা হলো মিতু বড়ুয়া (৫), শুভ বড়ুয়া (৪) ও লতা বড়ুয়া (২)।

মৃত তিন শিশুর বাবা লাল মোহন বড়ুয়া জানান, ভারী বৃষ্টিতে বেশি পানি জমে যাওয়ায় বাড়ির পাশের নালা পরিষ্কার করার জন্য তাঁরা স্বামী-স্ত্রী বের হয়েছিলেন। সন্তানেরা সবাই ঘুমিয়ে ছিল। এ সময় পাহাড়ধসে চোখের সামনে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। এখন পরিবারে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন জানান, প্রবল বৃষ্টিতে প্রথমে গতকাল দিবাগত রাত একটার দিকে জেলা শহরের কালাঘাটায় একটি বাসায় পাহাড় ধসে পড়ে। এ সময় ঘুমন্ত অবস্থায় কলেজছাত্র রেভা ত্রিপুরা (২২) মাটি চাপা পড়ে মারা যান।

মাটিচাপায় আহত ব্যাবিলন চাকমা বলেছেন, এলাকাবাসী তাৎক্ষণিকভাবে এসে তাঁকেসহ বীর বাহাদুর ত্রিপুরা (১৮) ও প্রসেন ত্রিপুরাকে (২৪) মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করেন। গুরুতর আহত বীর বাহাদুর ও প্রসেন ত্রিপুরাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর (ব্যাবিলন চাকমা) দুই পা মাটিতে আটকে পড়ে যাওয়ায় তিনিও আহত হয়েছেন।

কালাঘাটার ঘটনার এক ঘণ্টা পর লেমুঝিরি জেলেপাড়ায় পাহাড়ধসে মোহাম্মদ আজিজের বাড়ি মাটি চাপা পড়ে যায়। আজিজ কোনো রকমে বাড়ি থেকে বের হতে পারলেও তাঁর স্ত্রী কামরুন্নাহার (৪০) ও মেয়ে সুখিয়া আক্তারকে (১৪) এখনো উদ্ধার করা যায়নি।

বান্দরবানের ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা স্বপন কুমার ঘোষ জানান, কালাঘাটা থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লেমুঝিরি জেলেপাড়ায় নিখোঁজ মা-মেয়ের সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা চলছে। ১০ ফুট মাটি সরিয়েও এখনো চাপা পড়া বাড়ি থেকে কাউকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

চন্দনাইশে দাদি-নাতিসহ ৩ জনের মৃত্যু
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় (বান্দরবানসংলগ্ন) ধোপাছড়ি সম্বুনিয়া গ্রামে পাহাড়ধসে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ভোররাত চারটার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় দাদি মকাং (৫৫) ও নাতি ক্যসা খিয়াং (৭) মারা যায়। এক দিন আগে ওই বাড়িতে বেড়াতে আসা ১৩ বছরের কিশোরী মেম্রাউ দাদি-নাতির সঙ্গে ঘুমন্ত অবস্থায় পাহাড়ধসে মারা গেছে।

নিহত মকাংয়ের ছেলে সাইহ্লাউ (৪০) ও মেয়ে সানুকিয়াংকে (১৮) সংজ্ঞাহীন অবস্থায় বান্দরবান সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সানুকিয়াং বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজে পড়েন।

কুহালং ইউপির সদস্য উসানং খিয়াং তিনজনের মৃত্যুর তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

রাঙ্গুনিয়ায় নিখোঁজ ৮
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের বগাবিলী গ্রামে পাহাড়ধসে দুই পরিবারের আটজন নিখোঁজ রয়েছেন।

রাজানগর ইউপির চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম বলেন, প্রবল বর্ষণের কারণে নজরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হোসেনের মাটির ঘরের ওপর পাহাড় ধসে পড়ে। সেখানে এখনো চাপা পড়ে আছেন নজরুল, তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান এবং মোহাম্মদ হোসেন, তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কর্মকর্তা (ইউএনও) কামাল হোসেন বলেন, উদ্ধার অভিযান তদারকিতে তিনি ঘটনাস্থলে রয়েছেন।

Leave a Reply

Facebook
%d bloggers like this:
ব্রেকিং নিউজ