সৌম্য–মোস্তাফিজরা ঘুরে দাঁড়াক

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ৪ জুন মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে একটা ছবি পোস্ট করেছিলেন। সৌম্য সরকার ও তাসকিন আহমেদের সঙ্গে নিজের সেই ছবিতে সঙ্গে দারুণ একটা কথা লেখা—‘ইট ইজ হাই টাইম টু ফাইট ব্যাক অ্যান্ড কনকার’।
ছবিটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন সেশনে তোলা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওভালের ম্যাচটিতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স খুব ভালো না হলেও বৃষ্টি আর ভাগ্যের কারণে সে ম্যাচে হারতে হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে গেলে সেখানেই শেষ হয়ে যেত বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। তবে হঠাৎ কুড়িয়ে পাওয়া সৌভাগ্য বাংলাদেশ কী চমৎকারভাবেই না কাজে লাগাল। কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং প্রদর্শনী দিয়ে ছিনিয়ে নিল দুর্দান্ত এক জয়। সেমিফাইনালের পথ সুগম করে কেবল ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ দিয়ে সমীকরণটা নিজেদের দিকে টেনে নিয়ে পৌঁছে গেল সেমিফাইনালে। মোস্তাফিজের টুইটারে দেওয়া সেই লাইনটি তখন খুব মনে পড়ছিল, ‘ইট ইজ হাই টাইম টু ফাইট ব্যাক অ্যান্ড কনকার’। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসার পর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিই যখন ‘শেষ’ মনে হচ্ছিল, তখনই সেই ফাইটব্যাক। পরে সাকিব-মাহমুদউল্লাহর ২২৪ রানের জুটি দিয়ে ‘কনকার’—‘জয় করা’
ফাইট ব্যাক করার মঞ্চ আবারও প্রস্তুত বাংলাদেশের জন্য। প্রস্তুত ‘জয় করা’র সব অস্ত্রই। ১৫ জুন বৃহস্পতিবার বার্মিংহামের ঐতিহাসিক এজবাস্টন মাঠে সেই অস্ত্রগুলোই ঠিকঠাক কাজ করলেই বিরাট কোহলির শক্তিশালী ভারতীয় দলের বিপক্ষে দারুণ কিছুর আশা বাংলাদেশ করতেই পারে। মোস্তাফিজ-সৌম্য-তাসকিন—এই তিন অস্ত্রকেই সেদিন গর্জে উঠতে হবে। এই ত্রয়ী কি পারবেন দেশবাসীর সেই প্রত্যাশা ভার কাঁধে তুলে নিয়ে বড় মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করতে?
২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে বোলিংয়ে ঝড় তুলেই ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল তাসকিন আহমেদের। আজ থেকে ঠিক তিন বছর আগের কথা। ওটাও ছিল এই জুন মাসই। ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে সেদিন তাসকিন বাংলাদেশের জয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন দারুণভাবেই। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় সে ম্যাচ বাংলাদেশ জিততে পারেনি। সেটি ভিন্ন আলোচনা। তবে তাসকিন সেদিন দারুণভাবেই দিয়ে রেখেছিলেন নিজের আগমনী বার্তাটা। এখন পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে ৫ ওয়ানডেতে ১২ উইকেট তাঁর। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে গ্রুপের শেষ ম্যাচে কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২ উইকেট নিয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে দারুণ রেকর্ডের ধারাবাহিকতাটা এজবাস্টনের সেমিফাইনালে বজায় রাখতে পারলে এই ম্যাচে বাংলাদেশের ভালোই সুযোগ আছে।
মোস্তাফিজের টুইটার পেজে পোস্ট করা ছবির আরও একজন সৌম্য। ২০১৫ বিশ্বকাপে সাতক্ষীরার এই তরুণের ব্যাটেই শুরু হয়েছিলে নতুন দিনের পথে বাংলাদেশের ক্রিকেটের পথচলা। ভারতের বিপক্ষেও তাঁর রেকর্ড বেশ ভালো। চারটি ওয়ানডে ম্যাচে মোট রান ১৫৭—গড় ৩৯.২৫। ২০১৫ সালের জুনে ঢাকায় ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তিনটি ম্যাচে তাঁর স্কোর ছিল যথাক্রমে ৫৪, ৩৪ ও ৪০। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে ভালোই খেলেছিলেন। ডাবলিনে নিউজিল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আছে দুটি ফিফটি—একটি ৬১, অন্যটি ৮৭ রানের। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শুরুটাও মন্দ করেননি। ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ভালো খেলতে খেলতে ২৮ রানে আউট হয়ে ফিরেছিলেন। দৃষ্টিনন্দন সব শটে সেদিন ওভাল মাতাচ্ছিলেন তিনি। এরপর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিষ্প্রভ তাঁর ব্যাট। ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে সেই আপ্তবাক্য তো তাঁর জন্য দারুণভাবে প্রযোজ্য—এটাই সময় ঘুরে দাঁড়ানোর ও জয় করার। সৌম্য কি পারবেন?
মোস্তাফিজ নিজেই তো ভারতের বিপক্ষে খেলেই বিশ্বজোড়া খ্যাতি কুড়িয়েছেন। ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে রূপকথার মতো এক অভিষেক হয়েছিল তাঁর। ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতেই তুলে নিয়েছিলেন ১১ উইকেট। প্রথমটিতে ৫ উইকেট, দ্বিতীয়টিতে ৬ উইকেট। শেষ ওয়ানডেতে আরও ২ উইকেট। বাঁহাতি এই পেসারের বোলিং ধন্দে ফেলেছিল ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। ‘কাটার’ নামের এক অস্ত্র দিয়ে তিনি পরাভূত করেছিলেন ধোনি-রায়না-রাহানেদের মতো সেরা ব্যাটসম্যানদের।
ছোট্ট ক্রিকেট ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন দুটোর সঙ্গেই পরিচয় ঘটেছে মোস্তাফিজের। আইপিএলে খেলেছেন। সেখানেও নিজের বোলিংশৈলী দিয়ে মাত করেছেন। কাঁধে চোট পেয়েছেন। ক্রিকেট থেকে ছিটকে গেছেন। অস্ত্রোপচারের ধকলও সামলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেই সবকিছু যেমন স্বপ্নের মতো ঘটতে দেখেছিলেন, বর্তমান পরিস্থিতিটা ঠিক তেমন না হলেও মোস্তাফিজই কিন্তু বাংলাদেশের বোলিংয়ের মূল ভরসা। গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফর দিয়ে ফিরেছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষ সিরিজে নিজেকে ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজও গল্পটা একই। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অবশ্য এখনো ঠিক নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কার্ডিফের ম্যাচে দারুণ ইয়র্কারে একটি উইকেট অবশ্য নিয়েছেন। এজবাস্টনকে ঘুরে দাঁড়ানো আর জয় করার মঞ্চ যদি তিনি বানাতে পারেন, তাহলে কিন্তু রচিত হবে আরও একটি রূপকথাই।
এজবাস্টনের সেমিফাইনাল বাংলাদেশের জন্য বাঁচা–মরাজাতীয় কিছু নয়। তবে নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র তো বটেই। মোস্তাফিজ-সৌম্য-তাসকিনরা এই ব্যাপারটি অনুধাবন করতে পারছেন—এটা নিশ্চিত। এখন প্রয়োজন কেবল মাঠের সমীকরণটা মিলিয়ে নেওয়াই। নিজেদের ক্যারিয়ারকে ভিন্নমাত্রা দেওয়ার এক মস্ত সুযোগও এজবাস্টনের সেমিফাইনাল।

Leave a Reply

Facebook
%d bloggers like this:
ব্রেকিং নিউজ