পুনঃ তফসিল নিয়ে প্রস্তুত ইসি

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আসন্ন দশম সংসদ নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণা দিতে  প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন। প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ সব দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচন করার ব্যাপারে কমিশন সর্বোচ্চ ছাড় দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে।

ইসির নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এই বিষয়ে সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিনসহ চার নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে তারা পুনঃতফসিল দেয়ার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। তবে কবে নাগাদ তফসিল স্থগিত করা হবে তা বৈঠকে সিদ্ধান্ত না হলেও চলতি সপ্তাহের মধ্যেই স্থগিত করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। চলতি সপ্তাহকে রাজনৈতিক টার্নিং পয়েন্ট ধরে রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ করছে কমিশন।

পুনঃতফসিলের বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, নির্বাচন কমিশন পুনঃতফসিলের সিদ্ধান্ত মাথায় রেখে অতীতের কয়েকটি নির্বাচনে তফসিল পরিবর্তনের নজিরগুলো খতিয়ে দেখছে।

সচিবালয় আইনশাখা থেকে জানা যায়, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে সাংবিধানিক জটিলতা রয়েছে। কেননা সংসদ বহাল থেকে নির্বাচন হবে তাই নব নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ নিয়ে ইসি জটিলতায় পড়বে। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী চলমান সংসদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আইনগতভাবেই নব নির্বাচিতরা শপথ গ্রহণ করতে পারবে না। অর্থাৎ তাদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

আরেক দিকে হঠাৎ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণায় কমিশন অনেকটা চাপের মুখে পড়েছে। এছাড়া  নির্বাচনে গ্রহণ যোগ্যতার বিষয়টিও কমিশনকে ভাবতে হচ্ছে।

সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার সঙ্গে জাপার এক প্রতিনিধি দল দেখা করে পুনঃতফসিলের জন্য অনুরোধ করেন। তখন সিইসি এই বিষয়ে নাকচ করে দিলেও এখন বিষয়টি নিয়ে কমিশন কয়েক দফা বৈঠক করেছে।

রোববার জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের রাজনৈতিক বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর  সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিনের বৈঠকে  পুনঃতফসিল বিষয়ে কথা হয়েছে কিনা জানতে চানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ এবিসি নিউজ বিডির সঙ্গে বলেন, সমঝোতা হলে সবকিছুই সম্ভব। আগের বহু নির্বাচনে জাতীর স্বার্থে বহুবার তফসিল পরিবর্তিত করা হয়েছে। প্রয়োজনে এবারও তাই হবে।

কমিশনের একাধিক সূত্র জানায়, সবদলের অংশগ্রহণে বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনার জন্য দফায় দফায় বৈঠক হয়। গত ২৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সারাদেশের আইশৃঙ্খলার অবনতির বিষয়টিও বৈঠকে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে এক কমিশনার পুনঃতফসিল ঘোষণা করলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে যুক্তি দেন।

তবে বৈঠকে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ যুক্তি দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া পুনঃতফসিল হলে প্রধান বিরোধীদল সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তার নিশ্চয়তা কি? তবে সমঝোতা হলে তফসিল স্থগিত করে প্রয়োজনে  সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩(খ)অনুসারে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণ করার ব্যপারে কমিশন নীতিগতভাবে একমত পোষণ করে। অর্থাৎ  তফসিল স্থগিত করা হলে ২৪ জানুয়ারির পরে নির্বাচন করতে চায় নির্বাচন কমিশন।

একজন কমিশনার জানান, প্রধান বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনা পুনঃতফসিল এবং সমঝোতার উদ্যোগের জন্য রাষ্ট্রপতির  হস্তক্ষেপের জন্য দ্বারস্থ হওয়ার বিষয়ে কমিশনারদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

রোববার এবিসি নিউজ বিডির সঙ্গে আলাপকালে, পুনঃতফসিলের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) মো.জাবেদ আলী জানান, সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি নিয়ে খুব একট ভাবছে না কমিশন। এখনই এ ব্যাপারে কিছু বলাও যাচ্ছে না । জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি হোয়াট হ্যাপেন্ড। বিকজ পলিটিক্যাল টার্নিং পয়েন্ট ফর দিজ টাইম।

এদিকে তফিসল স্থগিত করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হাফিজ জানান, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার সুস্পষ্ট আভাস পেলে জাতীয় স্বার্থে তফসিল স্থগিত করার জন্য কমিশন সর্বদা প্রস্তুত।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মোবারক বলেন, পুনঃ তফসিলের বিষয়টি নিয়ে কমিশন যেমনটি ভাবছে তেমনি সাংবিধানিক জটিলতার বিষয়টিও ভাবছে। তবে যাই করা হোক সংবিধানকে সামনে রেখেই করতে হবে।

তিনি বলেন, সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। আবার ৭২ অনুচ্ছেদে আছে আগেই সংসদ না ভেঙ্গে গেলে সংসদ মেয়াদ হবে প্রথম বৈঠক হতে পরবর্তী পাঁচ বছর পর্যন্ত। এই দুটি অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ