বিপিডিবির ৬ প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে ২৯২৬ কোটি: টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (২৪ ডিসেম্বর) : ২০১০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সৌর প্রকল্প (সরকারি), সৌর প্রকল্প (আইপিপি) খাতের ৬টি প্রকল্পে ২ হাজার ৯২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকার অনিয়ম হয়েছে৷

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজ কার্যালয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এ তথ্য প্রকাশ করে।

‘বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির কর্মকর্তা নেওয়াজুল মওলা ও আশনা ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান৷

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) অনিয়ম তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌর প্রকল্প (সরকারি), সৌর প্রকল্প (আইপিপি) সংশ্লিষ্ট ৬টি খাতে অতিরিক্ত প্রকল্প ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে৷

বিপিডিবির হিসাব অনুযায়ী, সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ৮ কোটি টাকা প্রয়োজন হলেও গবেষণার আওতাভুক্ত ৬টি প্রকল্পে প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা বেশি ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে; যা গড়ে দেড় গুণেরও বেশি৷ এই প্রকল্পগুলোতে প্রয়োজনের চেয়ে মোট ২ হাজার ৯২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে৷

হিসাব কষে দেখা গেছে, ৬টি প্রকল্পে ৪ হাজার ৪৩ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রয়োজন হলেও ব্যয় করা হয়েছে ৬ হাজার ৯৭০ কোটি ৮ লাখ টাকা৷

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষেত্রবিশেষে, সরকারি প্রকল্প সরকারি জমিতে স্থাপিত হলেও (ভূমি অধিগ্রহণ ও ইজারার বিষয় না থাকা স্বত্ত্বেও), প্রতি মেগাওয়াট ইউনিট স্থাপনে ব্যয় ১৪ কোটি ৮ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে যা দেশের অন্যান্য সৌর প্রকল্পের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যয়বহুল৷

টিআইবি গবেষণার আওতাভুক্ত বিদ্যু খাতের ৫টি প্রকল্পে শুধু ভূমি ক্রয় এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানে মোট ২৪৯ কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকার দুর্নীতি হয়েছে৷

বিদ্যুৎ খাতে বিদেশি বিনিয়োগের মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ব্যবহার করা হয়েছে৷
প্রক্রিয়াগত অস্পষ্টতা রেখে বিদেশি বিনিয়োগের নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বাতিল করা হয়েছে৷

জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কর প্রণোদনা, শুল্ক ছাড়, ভ্যাট ছাড়, বিমায় প্রণোদনা যথেষ্ট কম বলে এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷

নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয় টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে৷

গবেষকরা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগের ৩ হাজার ২৮৭ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩১টি আনসলিসিটেড নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের ‘লেটার অব ইন্টেন্ট (এলওআই)’ বাতিল করেছে৷ এসব প্রকল্পের মধ্যে ইতোমধ্যেই ১৫টি প্রকল্পের জমি কেনা ও কর প্রদানসহ অফেরতযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে৷

৪টি প্রকল্পে বিদেশি কোম্পানির সরাসরি বিনিয়োগ আছে, যার ২টিতে শতভাগ মালিকানা বিদেশি কোম্পানির হাতে রয়েছে৷ তাই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি রয়েছে৷

নতুন করে ৫৫টি প্যাকেজে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ২২টি প্যাকেজে শুধু একটি করে দরপত্র পাওয়া গেছে এবং ১৩টি প্যাকেজে কোনো দরপত্র পাওয়া যায়নি৷  তাই নতুন দরপত্রে ‘রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি’ না থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি সীমিত হয়ে গেছে৷

টিআইবি বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রিন ফাইন্যান্সিং’ এর আওতায় নবায়নযোগ্য খাতের জন্য আলাদা একটি স্কিম থাকলেও দীর্ঘ ও জটিল আবেদন প্রক্রিয়াসহ নানাবিধ কারণে ব্যস্তবিক ব্যবহার খুবই সীমিত৷

গবেষণায় বলা হয়, দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবকাঠামো (বিস্তৃত এলাকা) ব্যবহার করে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের সুযোগ থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বিনিয়োগের ঘাটতি থাকায় তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে  না৷

আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থা যেমন এডিবি ও বিশ্বব্যাংক সরকারি খাতের চেয়ে বেসরকারি খাতের নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী হয়েছে৷ এতে সরকারি খাতের ভূমিকা সীমিত হয়ে গেছে৷ তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিকল্পনা বেসরকারি খাত, বিশেষ করে আইপিপিভিত্তিক উদ্যোগকে কেন্দ্র করে তৈরি হলেও এ খাতে তাদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে আকর্ষণীয় প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরি করেনি সরকার৷

নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি-২০২৫ এ নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের রূপরেখা তৈরি না করার কথা বলে টিআইবি৷

টিআইবি বলছে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর সর্বোচ্চ ৯৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (১১ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা) প্রয়োজন হবে। ২০৩০ সালের পর থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর সর্বোচ্চ ১.৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১৭ হাজার ২৮০ কোটি টাকা) প্রয়োজন হবে। কিন্তু অর্থায়নের কোনো সুনির্দিষ্ট ও সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা নেই সরকারের৷

মনোয়ারুল হক/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ