তাইওয়ানে ১১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রিতে যুক্তরাষ্ট্রকে তীব্র নিন্দা বেইজিংয়ের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি, (১৯ ডিসেম্বর) : তাইওয়ানের কাছে প্রায় ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে চীন। বেইজিং এ সিদ্ধান্তকে নিজেদের সার্বভৌমত্বের গুরুতর লঙ্ঘন এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির প্রতি বিপজ্জনক বার্তা বলে অভিহিত করেছে।
চীনের তাইওয়ান বিষয়ক দপ্তরের (টিএও) মুখপাত্র চেন বিনহুয়া বৃহস্পতিবার বলেন, এই অস্ত্র বিক্রি চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে “প্রকাশ্য হস্তক্ষেপের” শামিল। তার ভাষায়, এটি এক-চীন নীতি এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি যৌথ ঘোষণার স্পষ্ট লঙ্ঘন—বিশেষ করে ১৯৮২ সালের ১৭ আগস্টের ঘোষণার, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে তাইওয়ানে অস্ত্র বিক্রি কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
চেন বলেন, এই সিদ্ধান্ত চীনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা স্বার্থকে গুরুতরভাবে ক্ষুণ্ন করে এবং তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির কাছে ভুল বার্তা পাঠায়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে অবিলম্বে তাইওয়ানকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা এবং স্বাধীনতাপন্থী শক্তিকে সমর্থন দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তাইওয়ান ইস্যুতে “সর্বোচ্চ সতর্কতা” অবলম্বনের কথাও বলেন তিনি।
তাইওয়ানের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি)-কেও কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেন চেন। তার অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে এবং সামরিক পথ বেছে নিয়ে দলটি একগুঁয়েভাবে স্বাধীনতার পথে এগোচ্ছে। এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপ’ ও ‘অস্ত্রাগার’-এ পরিণত হবে এবং সাধারণ মানুষের জন্য “গভীর বিপর্যয়” ডেকে আনবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর অনুমোদিত এই বিশাল অস্ত্র প্যাকেজ—যাকে তাইওয়ানের জন্য সবচেয়ে বড় অস্ত্র চুক্তি বলা হচ্ছে—বুধবার রাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতির উদ্দেশে টেলিভিশন ভাষণে ঘোষণা করা হয়। তবে কার্যকর হতে হলে এটি মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনও প্রয়োজন।
চুক্তির আওতায় ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে ৮২টি হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (হিমার্স) ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ৪২০টি আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (এটিএসএমএস), যেগুলোর পাল্লা সর্বোচ্চ ৩০০ কিলোমিটার।
এ ছাড়া ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ৬০টি স্বচালিত হাউইটজার সিস্টেম ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম, এক বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ড্রোন বিক্রিতেও সম্মতি দিয়েছে ওয়াশিংটন। প্যাকেজে আরও রয়েছে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি সামরিক সফটওয়্যার, ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের জ্যাভেলিন ও টিওডব্লিউ ক্ষেপণাস্ত্র, ৯৬ মিলিয়ন ডলারের হেলিকপ্টারের খুচরা যন্ত্রাংশ এবং ৯১ মিলিয়ন ডলারের হারপুন ক্ষেপণাস্ত্র সংস্কার কিট।
এ অস্ত্র বিক্রির ঘটনায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এক-চীন নীতি লঙ্ঘন করেছে। তার মতে, এ পদক্ষেপ চীনের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং তাইওয়ান প্রণালিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করবে।
গুও বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদকে সামরিক শক্তি দিয়ে টিকিয়ে রাখার যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টা শেষ পর্যন্ত তাদেরই বিপক্ষে যাবে। তাইওয়ানকে ব্যবহার করে চীনকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা “ব্যর্থ হতে বাধ্য” বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তার অভিযোগ, তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ অস্ত্র কেনায় ব্যয় করছে, কিন্তু এতে তাদের পতন ঠেকানো যাবে না। বরং এতে প্রণালিজুড়ে বিপজ্জনক সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি আরও বাড়বে।
তবে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রকে এ সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে। তারা বলেছে, এই অস্ত্র সরবরাহ দ্বীপটির “যথেষ্ট আত্মরক্ষামূলক সক্ষমতা” বজায় রাখতে এবং শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ডের অংশ বলে মনে করে এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পুনঃএকত্রীকরণের কথা বলে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অধিকাংশ দেশ তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। তবে ওয়াশিংটন জোরপূর্বক দখলের বিরোধী এবং আইনগতভাবে তাইওয়ানের আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র সরবরাহে বাধ্য।
এর এক সপ্তাহ আগে বেইজিং যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের মধ্যে যেকোনো ধরনের সামরিক যোগাযোগের বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করে এবং স্বাধীনতাপন্থী শক্তির প্রতি কোনো ‘ভুল সংকেত’ না পাঠানোর জন্য ওয়াশিংটনকে সতর্ক করেছিল। সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
মনোয়ারুল হক/
