ধ্বংসস্তূপের নিচেই পুরো ভারতকে কবর দেওয়ার হুমকি পাকিস্তানের মন্ত্রীর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ, (৫ অক্টোবর) : কিছুদিন আগে ভারতের সেনাপ্রধান পাকিস্তানের মানচিত্র মুছে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। এবার পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ আজ রোববার ভোরে ভারতের শীর্ষ নিরাপত্তামহলের বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারত যদি যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, তাহলে তাদের যেসব যুদ্ধবিমান পাকিস্তান ধ্বংস করেছে, তার স্তূপের নিচেই ‘ভারতকে কবর দেওয়া হবে ইনশা আল্লাহ’।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ বলেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে খাজা আসিফ বলেন, ভারতের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য আসলে তাদের হারানো বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনার ব্যর্থ চেষ্টা। এসব বক্তব্য শীর্ষমহলে চাপের ইঙ্গিত দেয় বলে দাবি করেন তিনি।

খাজা আসিফ লেখেন, ‘এমন একতরফা ৬–০ হারের পর যদি তারা আবার চেষ্টা করে, পাকিস্তানের স্কোর আরও ভালোই হবে।’ আসিফ বলেন, ভারতের জনমত এখন শাসক দলের বিরুদ্ধে চলে গেছে। নেতাদের কথায় সেটিই ফুটে উঠছে। তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান আল্লাহর নামে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র, আমাদের রক্ষাকারীরা আল্লাহর সৈনিক। এবার ভারত ইনশাআল্লাহ তাদের বিমানগুলোর ধ্বংসস্তূপের নিচেই কবরস্থ হবে। আল্লাহু আকবর।’

এর আগে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্রও একই বিষয়ে ভারতের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান। ভারতের নেতাদের কথাবার্তার জবাবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সতর্ক করে বলেছে, উসকানিমূলক ও যুদ্ধোন্মাদ মন্তব্য আগ্রাসনের অজুহাত দাঁড় করাতে পারে এবং এর ফলে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ নেমে আসতে পারে।

পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) জানায়, এমন মন্তব্যে বোঝা যায় ভারত আবারও আগ্রাসনের মিথ্যা অজুহাত তৈরির চেষ্টা করছে। এর ফল দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ভয়াবহ হতে পারে।

এর এক দিন আগে ভারতের বিমানবাহিনীর প্রধান অমর প্রীত সিং দাবি করেন, গত মে মাসে দুই প্রতিবেশী পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সংঘর্ষে ভারত পাঁচটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান (এফ-১৬ ও জেএফ-১৭) ভূপাতিত করেছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিমান প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে আমাদের কাছে একটি দীর্ঘ পাল্লার হামলার প্রমাণ আছে। এর সঙ্গে পাঁচটি উন্নতমানের যুদ্ধবিমান (এফ-১৬ ও জেএফ-১৭ শ্রেণির) ধ্বংসের প্রমাণও আমাদের সিস্টেম দিয়েছে।’ তবে সিং কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের এই দাবিকে নাকচ করে দিয়ে বলেছে, ভারত বহুদিন ধরে নিজেকে ভুক্তভোগী হিসেবে দেখিয়ে আসছে, অথচ তারাই সহিংসতা উসকে দিয়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়া ও এর বাইরেও সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়েছে। এই ভুয়া বয়ান এখন ভেঙে পড়েছে।

আইএসপিআর আরও বলেছে, এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারতকেই ‘সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের আসল মুখ এবং আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার কেন্দ্রবিন্দু’ হিসেবে চেনে। এ বছরের আগের ঘটনাগুলোর উল্লেখ করে আইএসপিআর জানায়, ভারতের আগ্রাসন একসময় দুই পারমাণবিক শক্তিকে বড় যুদ্ধের দোরগোড়ায় ঠেলে দিয়েছিল। অথচ ভারতীয় নেতৃত্ব তাদের যুদ্ধবিমানের ধ্বংসস্তূপ এবং পাকিস্তানের দূরপাল্লার অস্ত্রের শক্তি ভুলে গেছে।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাপ্রধানদের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সতর্ক করে বলেছে, নতুন করে সংঘাত শুরু হলে সেটি ‘ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ’ ডেকে আনতে পারে। তারা আরও বলেছে, পাকিস্তান কখনো পিছু হটবে না। শত্রুতা শুরু হলে ‘বিনা দ্বিধায়, কোনো রকম সংযম ছাড়াই’ জবাব দেওয়া হবে।

আইএসপিআর বলেছে, যারা নতুন বাস্তবতা তৈরি করতে চাইছে, তারা বুঝে রাখুক পাকিস্তানও নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে—যার প্রতিক্রিয়া হবে দ্রুত, সুনির্দিষ্ট এবং ধ্বংসাত্মক। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আরও জানায়, পাকিস্তানকে মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়ার হুমকির জবাবও আছে। যদি পরিস্থিতি আসে, তাহলে ধ্বংস হবে উভয় পক্ষেরই।

এদিকে, নিরাপত্তা সূত্রগুলো ভারতের হুমকিকে ‘ফাঁকা বুলি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তারা বলেছে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশ রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

গত মে মাসে দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। এর সূচনা হয়েছিল জুম্ম-কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় পর্যটকদের ওপর হামলার পর। এতে ২৬ জন নিহত হন। ভারত অভিযোগ করেছিল, পাকিস্তান এই হামলার পেছনে রয়েছে। তবে ইসলামাবাদ জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। পাকিস্তান বলেছে, ভারত উসকানি ছাড়া তিন দিন ধরে সীমান্তে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে।

এরপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রতিরক্ষামূলক ‘অপারেশন বুনইয়ান-উম-মারসুস’ শুরু করে। এই অভিযানে পাকিস্তান ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান (যার মধ্যে তিনটি রাফালে) ও ডজনের বেশি ড্রোন ভূপাতিত করে। এরপর অন্তত ৮৭ ঘণ্টার লড়াই শেষে ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ঘাতের অবসান ঘটে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ