ইসলামী ব্যাংকে চাকরিচ্যুত করতে পরীক্ষা!
চট্টগ্রাম ব্যুরো, এবিসি নিউজ, (২৫ সেপ্টেম্বর) : ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের পর যোগদান করাদের চাকরিচ্যুতির ফন্দি আঁটছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে ব্যাংকটির কর্মকর্তা মোহাম্মদ সবুজ বলেন, সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সাড়ে ৫ হাজারের মতো বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা যেমন: সিনিয়র অফিসার, অফিসার, অফিসার (ক্যাশ), জুনিয়র অফিসার, জুনিয়র অফিসার (ক্যাশ), অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার, অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ) পদে নিয়োগের জন্য একটি ‘স্পেশাল কম্পিটেন্সি অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট’ নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, যা বাংলাদেশের সংবিধান, শ্রম আইন ২০০৬, সার্ভিস রুলস, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রণীত ব্যাংকিং আইন ও বিধিবিধানের পরিপন্থি। এসব পদে ৮ হাজারের মতো কর্মকর্তা থাকলেও কেবল ২০১৭ সালের পরে নিয়োগপ্রাপ্তদের পরীক্ষা জন্য সার্কুলার দিয়েছে ব্যাংকটি। ওই পরীক্ষার বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার পরীক্ষা গ্রহণের পাঁয়তারা করছে। বলা হয়েছে, এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক এবং এটি চাকরিতে বহাল থাকা ও ক্যারিয়ার উন্নতির পূর্বশর্ত। অনুপস্থিতদের আর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। বাস্তবতা হলো এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য ভালো না। বরং বৈষম্যমূলক। এটি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭, ২৯, ৩১-এ বর্ণিত সমতা, সমঅধিকার ও সমান কর্মসংস্থানের সুযোগ নীতির লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, পরীক্ষার উদ্দেশ্য স্থায়ী কর্মচারীদের একটি অংশকে চাকরিচ্যুত করা, যাদের ৩ থেকে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং যারা ইসলামী ব্যাংক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং অ্যাকাডেমি ও ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ থেকে শরিয়াহ্ ব্যাংকিং, মানি লন্ডারিং ও সিএফটি, ব্যাংকিং আইন ও চর্চা, আইসিটি ও ডিজিটাল ব্যাংকিং ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। অধিকাংশ প্রার্থী জেএআইবিবি, এআইবিবি অথবা ইসলামী ব্যাংকিং ডিপ্লোমা উত্তীর্ণ, যেখানে উল্লিখিত সিলেবাসের সব বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত। অনেকেই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত, যা দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে বৈধ।
তা ছাড়া ব্যাংকটি গত বছরের ৫ আগস্টের পর কোনো পরীক্ষা ছাড়াই কিছু গুদাম প্রহরী ও নিরাপত্তা কর্মীকে সহকারী কর্মকর্তা ও জুনিয়র অফিসার পদে পদোন্নতি দিয়েছে। একই সময়ে যাদের পদোন্নতির সুযোগ ছিল তাদের মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) নেওয়া হলেও এই পরীক্ষার জন্য মনোনীতদের কাউকেই পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে কোনো কারণ ছাড়াই পিয়নদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বেশ কয়েকটি দাবিও জানান। দাবিগুলো হলো প্রচলিত আইন, নীতি বা ব্যাংকিং বিধিবিধানের বাইরে কোনো পরীক্ষা গ্রহণ করা যাবে না। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরিচ্যুতির উদ্দেশ্যে নেওয়া যেকোনো মূল্যায়ন অবিলম্বে স্থগিত করার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। প্রতিটি পদে ভিন্ন ভিন্ন সিলেবাস অনুসারে দ্রুত পদোন্নতি পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের ন্যায্য আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, অ্যাডভোকেট মো. হাসান আলী, অ্যাডভোকেট কে এম সাইফুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট মুশফিকুল আবরার।