গাজার যুদ্ধ এখনই শেষ করতে পারি: ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ, (২৫ সেপ্টেম্বর) : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা গাজার যুদ্ধ শেষ করতে চাই। আমরা এটি শেষ করব। হয়তো এখনই শেষ করতে পারি।’ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে আরব ও মুসলিম বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। বৈঠকটিকে ট্রাম্প ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেন। এতে সৌদি আরব, তুরস্ক, কাতার, মিসরসহ আটটি দেশের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে যুদ্ধবিরতি, জিম্মি মুক্তি এবং মানবিক সংকট নিরসনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বৈঠককে ‘ফলপ্রসূ’ বলেছেন।

ট্রাম্প বলেন, এই বৈঠকটি ‘আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক’। তিনি বলেন, ‘গাজার যুদ্ধ এমন এক যুদ্ধ, যা কখনো শুরুই হওয়া উচিত ছিল না। এখন আমাদের কাজ এটি শেষ করা।’

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, মিসর, জর্ডান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানের নেতারা অংশ নেন। ট্রাম্প বলেন, ‘এখানে সব বড় খেলোয়াড় আছেন, শুধু ইসরায়েল বাদে। তবে পরের ধাপে আমি ইসরায়েলের সঙ্গেও বৈঠক করব।’ তিনি জানান, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে আগামী সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে তার সাক্ষাৎ হবে।

বৈঠক শেষে ট্রাম্প সাংবাদিকদের সামনে কোনো মন্তব্য না করে শুধু হাত নাড়েন। তবে তার বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ সাংবাদিকদের থাম্বস আপ দেখিয়ে ইঙ্গিত দেন যে বৈঠকটি ভালো হয়েছে।

এই বৈঠকে গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে কীভাবে অঞ্চলটি পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরিকল্পনা উত্থাপনের কথা ছিল। এই পরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুত করেছেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। এটি গত সপ্তাহে টাইমস অব ইসরায়েলে প্রকাশিত হয়েছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বৈঠকের পর বলেন, এটি ‘খুবই ফলপ্রসূ’ ছিল। তিনি জানান, বৈঠকের ব্যাপারে একটি যৌথ বিবৃতি শিগগিরই প্রকাশিত হবে। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলা একটি ‘গণহত্যা’। তুরস্ক এর জবাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করেছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, বৈঠকে গাজার চলমান যুদ্ধ বন্ধ, একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করা, সব জিম্মির মুক্তির দাবি এবং গাজার মানবিক সংকট মোকাবিলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর আগের দিন ট্রাম্প ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট র সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৫৬টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘এই স্বীকৃতির মাধ্যমে হামাসকে সম্মান দেখানো হয়। ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর এটি করা যায় না।’ তিনি বলেন, ‘আমি সব সময়ই ইসরায়েলের পক্ষে ছিলাম, এখনো আছি। কিন্তু আমরা এমন একটি সমাধান চাই, যা সবার জন্য ভালো হবে।’

পাল্টা বলেন, ‘৭ অক্টোবর কেউ ভুলে যায়নি। কিন্তু প্রায় দুই বছর ধরে যুদ্ধ চলছে। এর ফল কী হয়েছে?’ তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল অনেক হামাস নেতাকে হত্যা করেছে, এটা সফলতা। কিন্তু এখনো প্রথম দিনের মতোই হামাস যোদ্ধা আছে। অর্থাৎ এই কৌশল কাজ করছে না।’ ফরাসি প্রেসিডেন্ট একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালুর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। এর পর থেকে ইসরায়েল কঠোর সামরিক অভিযান শুরু করে। এতে ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সম্প্রতি গাজা সিটিতে ইসরায়েলি স্থল অভিযান শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কার পাবেন না
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি সত্যিই নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে চান,তাহলে তাকে গাজায় চলমান যুদ্ধ থামাতে হবে। গত মঙ্গলবার একটি টেলিভিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ম্যাখোঁ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রাম্প এ পুরস্কার পেতে পারবেন না। নিউইয়র্কে ফরাসি বিএফএম টিভিকে বলেন, ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যুদ্ধ থামানোর ক্ষমতা শুধুমাত্র ট্রাম্পেরই আছে।

তিনি বলেন, ‘একমাত্র যিনি এ ব্যাপারে কিছু করতে পারেন তিনি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। কেননা তিনি আমাদের চেয়ে বেশি কিছু করতে পারেন। আমরা গাজা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করি না। যুক্তরাষ্ট্র এই কাজটি করে।’

গতকাল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ায় মিত্র দেশগুলোর সমালোচনা করেন। তার মতে, এটি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে পুরস্কৃত করবে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই গাজা যুদ্ধ এখনই বন্ধ করতে হবে। আমাদের এখনই শান্তি নিয়ে কাজ করতে হবে।’

তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘একজন প্রেসিডেন্টকে বলতে শুনলাম-আমি শান্তি চাই, আমি সাতটি সংঘাত বন্ধ করেছি। তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার চান। আপনি যদি সত্যিই এই পুরস্কার পেতে চান, তাহলে এই সংঘাত থামিয়ে তা পাওয়া সম্ভব।’

ইতোমধ্যে কম্বোডিয়া, ইসরায়েল ও পাকিস্তান ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তির জন্য যা করেছেন জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেওয়া সবাই মিলে তা করতে পারেননি।’ সূত্র: রয়টার্স, আল-জাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েল

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ