স্বীকৃতি ও বৈঠকের মধ্যেও গাজায় প্রাণহানি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ, (২৪ সেপ্টেম্বর) : গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি অব্যাহত রয়েছে। গত সোমবারও বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। হামলা বিশেষ করে গাজা সিটিতে হচ্ছে। স্থল ও আকাশ দুই পথেই অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল হামলার পর গাজা সিটি থেকে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। পরে জানা যায়, সেখানে অন্তত ১৫ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া অবরুদ্ধ উপত্যকাটির অন্যান্য স্থানে প্রাণ হারিয়েছেন আরও চারজন।
এমন একটি সময় এসব হামলার ঘটনা ঘটছে, যখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে পশ্চিমের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। ইসরায়েল এর জবাবে নিন্দা জানিয়েছে এবং পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছে। ইসরায়েল পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হলে কার্যত মৃত্যু ঘটবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণার। যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে ইসরায়েলকে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ না নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
তবে এসব কারণে গাজার যুদ্ধে কোনো ধীরগতি বা স্থবিরতা দেখা যায়নি। সেটি আগের মতোই জোরেশোরে চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গোটা উপত্যকাকে আগের মতোই অবরুদ্ধ করে রেখেছে তারা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের হাসপাতালগুলোর জ্বালানি ফুরিয়ে আসছে। আর কয়েক দিন হয়তো সেগুলো সচল থাকবে যদি না তারা জ্বালানি পায়। এর পরে একে একে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে সব হাসপাতালেরই।
ইসরায়েল গাজার যুদ্ধে ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত তারা হামলা চালিয়ে অন্তত ৬৫ হাজার ৩৪৪ জনকে হত্যা করেছে।
নিহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক। গাজার গণমাধ্যম দপ্তর বলছে, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হবে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া নিখোঁজ ফিলিস্তিনিরা এখনো হিসাবের বাইরেই রয়ে গেছেন। তাদের আমলে নিলে মৃতের সংখ্যা আরও কয়েক হাজার বৃদ্ধি পাবে।
গাজার যুদ্ধে এরই মধ্যে একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন মানুষ। নতুন করে ইসরায়েল গাজা সিটি দখলে নেওয়ার অভিযান শুরু করার পর আবারও ১০ লাখ মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। তাদের অর্ধেক এখন পর্যন্ত বের হয়ে যেতে পেরেছে শহরটি থেকে। বাকি অর্ধেক এখনো রয়ে গেছেন শহরটির ভেতরেই। সবাই নতুন করে আবারও হয়েছেন বাস্তুচ্যুত। ইসরায়েলি তাণ্ডবলীলায় গোটা গাজাই এখন ধ্বংসস্তূপ। ফলে তারা জানেন না কোথায় যাবেন বা কোন অঞ্চল নিরাপদ। শুধু গাজা সিটি ছাড়া বাদবাকি সব এলাকাই এখন
রয়েছে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে।
ইসরায়েল এতটাই নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে যে তাদের হাত থেকে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরাও রেহাই পাননি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধের শুরু থেকে ১ হাজার ৭২৩ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী নিহত হয়েছেন গাজায়।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ৩৮টি হাসপাতালকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলার জেরে ও রসদ ঢুকতে না দেওয়ার পরিণতি হিসেবে গাজা সিটির সেন্ট জন চক্ষু হাসপাতাল, আল-রান্তিসি শিশু হাসপাতাল এবং শেখ হামাদ হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতি চলমান থাকলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আরও বেশ কয়েকটি হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাবে।
শুধু গাজায় নয়, পূর্ব জেরুজালেমেও ফিলিস্তিনিদের ওপর চড়াও হতে দেখা গেছে ইসরায়েলি বাহিনীকে। সেখানে এক ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছেন। সূত্র: আল-জাজিরা