পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক চায় যুক্তরাষ্ট্র, তবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষতি করে নয়: রুবিও
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি, (২৭ অক্টোবর) : পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে চায়, তবে এটি ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ক্ষতি করে নয় বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
এ বিষয়ে মার্কিন দৃষ্টিকোণ থেকে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে রুবিও বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর প্রচেষ্টা চললেও ভারতের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বের কোনো ক্ষতি হবে না।’ তিনি এটিকে ‘পরিণত ও বাস্তববাদী পররাষ্ট্রনীতির’ অংশ হিসেবে বর্ণনা করেন।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মালয়েশিয়ায় আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রুবিও। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।
রুবিও বলেন, ‘ভারতেরও এমন কিছু দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নয়। একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রেরও তেমন সম্পর্ক থাকতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে আমরা যা করছি, তা আমাদের ভারতের সঙ্গে গভীর, ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষতি করবে না।’
ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের দিকে কিছুটা ঝুঁকেছে বলে মনে হচ্ছে, যা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে কিছুটা শীতলতা, কারণ ট্রাম্প ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর মধ্যে অর্ধেক শুল্ককে তিনি জরিমানা বা শাস্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন, কারণ ভারত ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক মাত্র ১৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও তেল নিয়ে চুক্তি করেছে। ট্রাম্প পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ‘মহান নেতা’ বলে প্রশংসা করেছেন, যে শব্দ তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্যও ব্যবহার করেন।
রুবিও বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে কোনো সংঘাত শুরু হওয়ার আগেই তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের সঙ্গে জোট ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব পুনর্গঠন করতে আগ্রহী। আমরা ভারতের সঙ্গে চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন, তবে আমাদের কাজ হলো যেখানে সম্ভব, সেখানে অংশীদারিত্বের সুযোগ তৈরি করা।’
এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে দীর্ঘদিন ধরে অংশীদারিত্ব রয়েছে, এবং এটিকে আরও বিস্তৃত করার চেষ্টা চলছে।
রবিবার রুবিও ট্রাম্পের সঙ্গে মালয়েশিয়ায় আসিয়ান সম্মেলনে পৌঁছান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সম্মেলনে যোগ দেননি।
রুবিও সোমবার আসিয়ান সম্মেলনের পাশাপাশি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এই বৈঠকে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা এবং রাশিয়ার তেল আমদানির বিষয়টি নিয়ে কথা হতে পারে।
ভারত বলেছে, তারা কার কাছ থেকে তেল কিনবে, তা নির্ধারণের অধিকার তাদের রয়েছে। তবে রুবিও বলেছেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে যে, তারা তেলের উৎস বৈচিত্র্য আনতে চায় এবং তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও তেল কিনতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, ‘আমরা যত বেশি তেল তাদের বিক্রি করব, তারা অন্য কারও কাছ থেকে তত কম কিনবে।’
ট্রাম্প এই বিষয়ে আরও সরাসরি বলেছেন যে, মোদি তাকে জানিয়েছেন ভারত রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করবে। তবে ভারত কূটনৈতিকভাবে এই দাবি অস্বীকার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, ভারতের তেল ক্রয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থায়ন করছে। ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল কেনে, যা তাদের মোট তেল আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র দুটি বড় রুশ তেল সরবরাহকারীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় ভারতীয় ক্রেতারা বিকল্প উৎসের দিকে ঝুঁকছে। সূত্র: দ্য হিন্দুস্তান টাইমস
