নগদহীন অর্থনীতি বাস্তবায়নে আসছে নতুন পদ্ধতি

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসি নিউজ, (১৬ সেপ্টেম্বর) : বাংলাদেশে নগদ টাকার চাহিদা প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। কয়েক বছর ধরেই হারটি একই রকম। এই প্রবণতা ভাঙতে ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও স্বচ্ছ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূত তাৎক্ষণিক পেমেন্ট সিস্টেম চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই পদ্ধতি সফলভাবে চালু হলে দেশের প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এক প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবে এবং নগদহীন অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান ও ডিজিটাল ব্যাংক এই একক প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘স্টেকহোল্ডার ডিসকাশন অন ইন্টার-অপারেবল পেমেন্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

গভর্নর বলেন, বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংক চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে ইন্টার-অপারেবল ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম চালু করতে গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আগেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কাজ হয়নি। তবে এবার প্রমাণিত আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কার্যকর সিস্টেম চালু করতে চাই।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, একটা ইন্টার-অপারেবল ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম ডেভেলপ করা, যেটার মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো স্থান থেকে যখন ইচ্ছা তখনই পেমেন্ট করতে পারবেন বা বিনিময় করতে পারবেন।’

অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, ‘নগদনির্ভর অর্থনীতি আমাদের জন্য ব্যয়বহুল। ব্যাংকিং খাতকে প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ও সরকারকে প্রায় দেড় লাখ কোটি (১ দশমিক ৫৩ ট্রিলিয়ন) টাকার রাজস্ব হারাতে হচ্ছে। তাই ধাপে ধাপে নগদ ব্যবহার কমিয়ে ডিজিটাল লেনদেনে যেতে হবে।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী, গেটস ফাউন্ডেশন ও আইএফএসের বাংলাদেশের প্রধান স্নিগ্ধা আলী।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। দেশের প্রায় ৬৪ শতাংশ মানুষ আর্থিক খাতের আওতায় এসেছে, যদিও ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ জনগণ এখনো এর বাইরে বলে জানান আহসান এইচ মনসুর। শুধু আওতা বাড়ানোই যথেষ্ট নয়; বরং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে গভীরভাবে আর্থিক খাতের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে বলে মত দেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে সব ব্যবসায়িক লাইসেন্সধারীর দোকানে কিউআর কোড প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে নগদ টাকা না তুলে সরাসরি ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবহারে উৎসাহিত করা সম্ভব হবে বলে জানান গভর্নর।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো সামনে–পেছনে উভয় প্রান্তে নগদ ব্যবহার কমানো। দোকান, রেস্তোরাঁ কিংবা বাজারে ডিজিটাল কিউআর পেমেন্ট প্রচলন করতে চাই।’

গভর্নর বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণ খাত বিশাল হলেও ব্যাংকিং খাতে কম, ১০ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে। এ খাতকে প্রযুক্তিনির্ভর না করলে টেকসই হবে না। একইভাবে এজেন্ট ব্যাংকিং দ্রুত বাড়ছে। তবে ঋণ বিতরণে এখনো সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অন্তত ৫০ শতাংশ এজেন্ট নারী হতে হবে। এ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘গ্রামীণ পরিবারের নারীরা সহজে গৃহিণী, কন্যা বা শাশুড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। ফলে নারীদের এজেন্ট হিসেবে যুক্ত করলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়বে।’

গভর্নর বলেন, ‘ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। কিন্তু এখন তা বাতিল করা হয়েছে। এতে ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড ব্যবহার বাড়বে আশা করছি।’ পাশাপাশি এমএফএস খাতে ক্ষুদ্রঋণের সীমা ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তা আরও বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ