ডুমুরিয়ায় তিন মাস ধরে পানিবন্দি ৪০ গ্রামের মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক (খুলনা), এবিসি নিউজ, (১৬ সেপ্টেম্বর) : পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে খুলনার ডুমুরিয়ায় ৪০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। চলতি বছরের টানা ভারী বৃষ্টিতে বিলের হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি, মাছের ঘেরও প্লাবিত হয়।

এদিকে সংকট নিরসনে খুলনা জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সাধারণ মানুষের ত্রিপক্ষীয় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত শনিবার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান জলাবদ্ধ এলাকা ও শলুয়া স্লুইসগেট পরিদর্শন শেষে পাউবো ও জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

স্থানীয়রা জানান, বিল ডাকাতিয়ার ডুমুরিয়া অংশে পানি নিষ্কাশনে সংযুক্ত হরি নদী, হামকুড়া নদী ও ভদ্রা নদী পুরোপুরি ভরাট হয়েছে। ফলে বর্ষার পানি বের হতে না পেরে সারা বছরই জলাবদ্ধতা থাকে। এর মধ্যে রয়েছে ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর, রঘুনাথপুর, ধামালিয়া, মাগুরাঘোনা, খর্ণিয়া, আটলিয়া, গুটুদিয়াসহ ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের ৪০টি গ্রাম। এসব অঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাবন করছে। পানিবন্দি গ্রামগুলো হচ্ছে- মুজারঘুটা, বারানসি, সাড়াভিটা, বটবেড়া, কৃষ্ণনগর, দেড়লি, বশিরাবাদ, আন্দুলিয়া, কোমরাইল, চেচুড়ি, কাটেঙ্গা, টোলনা, বরুনা, গজেন্দ্রপুর, রূপরামপুর, রামকৃষ্ণপুর, শান্তিনগর, ঘোনা, বিলপাটিয়ালা, মাধবকাটি, মান্দ্রা, ময়নাপুর, বিলসিংগা, রানাই, পাঁচপোতা, ঘোষড়া, বাদুড়িয়া, আলাদিপুর, আটলিয়া, বয়ারশিং, আধারমানিক, খড়িয়া, কোমলপুর, গুটুদিয়া, পাটকেলপোতা, মির্জাপুর, হাজিডাঙ্গা, গোলনা, খলসী, সাজিয়াড়া ও আরাজি ডুমুরিয়া।

ডুমুরিয়া উত্তরাঞ্চল বিল রক্ষা সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক জি এম আমানুল্লাহ জানান, শৈলমারী রেগুলেটরের আওতায় ডুমুরিয়ার বিল ডাকাতিয়াসহ ছোট-বড় ২৪টি বিল আছে। যার প্রায় শতভাগ চলতি বছরের ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। জলাবদ্ধতার কারণে বিলের কেউ ধান চাষ করতে পারেনি। গত বছর পানিতে ভেসে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতিতে মাছ চাষও বন্ধ হয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানের জন্য তিন ধাপে চেষ্টা চলছে। প্রথমত দ্রুত কীভাবে জলাবদ্ধতা কমানো যায় সেটির কাজ চলছে। দ্বিতীয়ত- মধ্যবর্তী এবং তৃতীয়ত দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দে শৈলমারী গেটের মুখ থেকে সালতা মোহনা পর্যন্ত পলি অপসারণের কাজ চলমান রয়েছে।

এ ছাড়া প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে শৈলমারী নদীর সাড়ে ১৫ কিলোমিটার ড্রেজিং, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি পাম্প স্থাপন এবং ২৪টি খাল পুনর্খনন প্রকল্পের সমীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। মূলত নদী ও খাল খননের ক্ষেত্রে পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং পরিবেশের দিক বিবেচনায় সমীক্ষাটি শেষ করতে আরও দুই মাস সময়ের প্রয়োজন হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, বিলডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়া অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের জন্য শৈলমারী গেটের মুখ থেকে শুরু করে আপার সালতা পর্যন্ত জরুরিভাবে পলি অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছে। দুটি ভাসমান ভেকু ও দুটি লংবুম ভেকু দিয়ে খননের কাজ চলছে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ