সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমায় চাপে নির্ধারিত আয়ের মানুষ
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ, ঢাকা (১৪ সেপ্টেম্বর) : সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমায় চাপে পড়েছে এর ওপর নির্ভরশীল নির্ধারিত আয়ের মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ এমনিতেই চাপে রয়েছেন। তার ওপর চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার কিছুটা কমিয়েছে সরকার। এতে সরকারি চাকরি থেকে অবসরভোগীসহ নির্ধারিত আয়ের মানুষ আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে, বেকারত্ব বিশেষ করে ছদ্ম বেকারত্ব মহামারি আকারে বেড়েছে। কর্মসংস্থান কমেছে। মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও এখনো তা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আসছে না। এমন বাস্তবতার মধ্যেই সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগামও টানা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে এখন সঞ্চয়পত্রের সুদহারও কমানো হলো। ফলে সামগ্রিকভাবে নতুন অর্থবছরের শুরু থেকেই মধ্যবিত্তের ওপর চাপ কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে যাদের পারিবারিক খরচের বড় একটি অংশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে আসে, তারা কিছুটা চাপে পড়েছেন। বাস্তবতা হলো দেশের অবসরপ্রাপ্ত বা বয়স্ক জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশের মাসিক খরচের বেশির ভাগ এ সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে আসে। ফলে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমে যাওয়া তাদের জন্য অশনিসংকেত। এ পরিস্থিতিতে খরচ কমানোর বাস্তবতা তৈরি হয়। আয় কমলে মানুষ সাধারণত প্রথমে ভোগ ব্যয় কমান, অর্থাৎ খাবারদাবারের মান ও পরিমাণ কমে যায়। বেশ কিছু গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। বিশেষ করে এ উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় আয় কমে যাওয়া আরও বিপজ্জনক।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষ। ফলে অনেক দেশের সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতির হাত থেকে এই শ্রেণিকে রক্ষা করতে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি হাতে নেয়। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মতো দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে এ ধরনের বিশেষায়িত কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ভারতে আধার কার্ড নামের ডিজিটাল আইডি আছে সবার। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো কর্মসূচি নেই। দেশের সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন কর্মসূচি আছে; কিন্তু তা একেবারেই অপ্রতুল। ফলে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ সঞ্চয়পত্রের ওপর ভরসা করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় সময় সঞ্চয়পত্রের সুদহার পুনর্নির্ধারণ করবে, তা ঠিক। কিন্তু মূল বিষয় হলো মানুষকে স্বস্তি দেওয়া। সেটা হতে পারে মূল্যস্ফীতির রাশ টানার মাধ্যমে, হতে পারে নানা ধরনের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশ কোনোটাই করতে পারেনি। এমন বাস্তবতায় সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো।
এই প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের অর্থনীতির বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে বিনিয়োগ, মজুরি এবং শ্রমবাজার কোথাও খুব বেশি সুখবর নেই। শুধু রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় বাদে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির কোনো খাতেই আয় বাড়ছে না। মানুষের আয় না বাড়লেও ব্যয় বাড়ছে। এই অবস্থায় নতুন করে সঞ্চয় করার মতো সক্ষমতা অধিকাংশ মানুষেরই নেই। অর্থাৎ মুনাফা বাড়ানোর পরও যেমন সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ বাড়েনি, এখন কমানোর পরও সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ খুব বেশি কমবে না। এমন পরিস্থিতিতে সরকার তাহলে কেন সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সরকার সঞ্চয়পত্রে যে সংস্কার করেছে সেটি মূলত সুদহার বাজারভিত্তিক করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। সুদহার কমানোর জন্য নয়। কারণ সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি ঋণ না নিতে আইএমএফেরও পরামর্শ রয়েছে।’