একসঙ্গে পাঁচ পণ্যের দামে অস্বস্তি

এদিকে পাঁচ পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা সরবরাহে টান পড়াকে দায়ী করেছেন। অন্যদিকে রসুন ও সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করা হচ্ছে।

চালের মধ্যে দাম বেশি বেড়েছে মোটা চাল ও গত বোরো মৌসুমে উৎপাদিত চালের। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের বিক্রেতা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, তিনি মোটা গুটি ও স্বর্ণা চাল পাইকারি ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা ও খুচরা ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা দরে বিক্রি করছেন। মাঝারি ২৮ জাতের চাল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা দরে। মিনিকেট নামের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। তিনি জানান, মোটা চালের দাম কেজিতে দেড় থেকে দুই টাকা এবং ২৮ ও মিনিকেট চালের দাম তিন থেকে চার টাকা বেড়েছে। রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের বিসমিল্লাহ রাইস এজেন্সির বিক্রেতা চিত্তরঞ্জন সাহা বলেন, মোটা চালের দাম ৫০ কেজির বস্তায় ১০০ টাকা বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন মিল থেকে নতুন করে আনতে গেলে চালের দাম আরও বেশি পড়বে। কারওয়ান বাজারের চালের দোকান মালিক ও সরবরাহকারী মো. ফারুক হোসেন তিন দিন উত্তরবঙ্গ ঘুরে চাল না কিনেই ঢাকা ফিরেছেন। তিনি বলেন, এখন চাল আনলে ৩৫ টাকা কেজি দরে দোকানমালিকদের কাছে বেচতে হবে। তা কয়েক দিন আগেও ৩২ থেকে ৩২ টাকা ৫০ পয়সা ছিল।

বগুড়ার আলাল গ্রুপের ব্যবস্থাপক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধি তারেক খান গতকাল মঙ্গলবার মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের বাজার ঘুরে ঘুরে চালের সরবরাহ আদেশ নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘বগুড়ায় এখন গুটি চালের লোড প্রাইস (ট্রাকে ওঠা পর্যন্ত মূল্য) ১ হাজার ৭৬০ টাকা (৩৫ টাকা ২০ পয়সা কেজি)। এর সঙ্গে ভাড়া ও অন্যান্য খরচ যোগ করে আড়তমূল্য ঠিক হবে। তারপর খুচরা মূল্যের বিষয়।

আমন মৌসুম শেষ না হতেই চালের দাম বাড়ল কেন, জানতে চাইলে তারেক খান বলেন, সরকার চাল কিনছে ৩৩ টাকা কেজি দরে। সেখানে নগদ টাকা পাওয়া যায়। তার ওপর মানে একটু নয়ছয় হলেও অসুবিধা হয় না। ফলে মিলমালিকেরা সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করছেন। এতে বাজারে চাপ পড়েছে।

বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম গত অক্টোবর মাসে লিটারে ৬ টাকা বাড়িয়েছিল কোম্পানিগুলো। তিন মাস পরেই আবার লিটারে ৫ টাকা বৃদ্ধির কথা জানিয়ে তারা বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলকে চিঠি দিয়েছে।

বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে বলা হয়, প্রতি লিটার তেলের নতুন দাম হবে ১০৫ টাকা। বর্তমানে সিটি, মেঘনাসহ কয়েকটি কোম্পানি প্রতি লিটার তেল ১০০ টাকা ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ১০২ টাকা দরে বিক্রি করছে। বাজারে ইতিমধ্যে কোম্পানির প্রতিনিধিরা দাম বৃদ্ধির কথা দোকানমালিকদের জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে ১ জানুয়ারি দেশে দাম বাড়ানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা এখনো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাননি। এ সপ্তাহে তা পাওয়া যাবে।

চিনির দামের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘দাম তো বাড়েনি। চিনির কস্টিং (আমদানি ও পরিশোধন ব্যয়সহ দাম) এখন কেজিপ্রতি ৭০ টাকা।’

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিজান স্টোরের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, এখন এক বস্তা চিনির দাম পড়ছে ৩ হাজার ২২০ টাকা। খরচসহ প্রতি কেজির ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ৬৫ টাকা। বিক্রি করতে হবে ৬৮ টাকা দরে। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগেও চিনি ৬৪ টাকা ছিল।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা দোকানে খোলা ময়দার দাম কেজিতে প্রায় ৪-৫ টাকা বেড়ে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন দামে ময়দা কিনলে আরও বেশি দরে বিক্রি করতে হবে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, কিছুদিন আগেও এক বস্তা (৭৪ কেজি) ময়দা ২ হাজার ১০০ টাকা ছিল, এখন তা ৫০০ টাকা বেশি। উল্লেখ্য, এ হিসাবে প্রতি কেজি ময়দার দাম ৬ টাকা ৭৫ পয়সা বেড়েছে।

এ বিষয়ে সিটি গ্রুপের বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ময়দার জন্য গম আসে কানাডা থেকে। কিন্তু সেই গম এখন মিলছে না। এ ছাড়া কানাডার গমের দাম বেড়েছে বলে ময়দার দামে প্রভাব পড়েছে।

চট্টগ্রামের বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরীও বলেন, কানাডার গমের সরবরাহ কম বলেই দাম বাড়ছে। কিছুদিন আগেও এ গমের দাম ছিল মণপ্রতি ৮০০-৮৫০ টাকা। এখন তা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এখন কোনো আমদানিকারকের কাছে কানাডার গম আছে বলে আমার জানা নেই।’

ঢাকার বাজারে রসুনের দাম চড়া অনেক দিন ধরেই। এবার তা কেজিতে আরও ২০ টাকা বাড়ল। বাজারে চীনা রসুন এখন ২২০ টাকা ও দেশি রসুন ১৮০-১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির জন্য চীনে রসুনের দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন বিক্রেতারা।

চাল ও ময়দার মূল্যবৃদ্ধিকে আকস্মিক উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। গত সোমবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, আমন মৌসুম শেষে বাজারে নতুন চাল আসায় এই সময়ে চালের দাম কমার কথা ছিল। সংগঠনটি মনে করে, আন্তর্জাতিক বাজারে গমের মূল্য নিম্নমুখী। এ সময় দেশে ময়দার দাম বৃদ্ধির কারণ নেই। তারা এ ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি বৃদ্ধির দাবি করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ