কে শোনে কার কথা !

Jatiya-Press-Clubআজমী আনোয়ার, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার আগে-পরে মোট ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন সংগঠন তাদের দাবি দাওয়া আদায়ে হাজির হয়। প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ থেকে হাত মাইকে বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রতিনিধিরা। রিকশায় এবং একটি গাছের ডালে ছিল দুইটি করে মোট চারটি বড় মাইক। চারপাশে গাড়ির প্যাঁ পোঁ তো ছিলই। ফলে কেউ কারও কথা শুনছিলেন না। আবেগ, অনুভূতি, দাবি-দাওয়া সব চাপা পড়ে যাচ্ছিল শব্দের নিচে। অবস্থা এমন হয়, কে শোনে কার কথা!

প্রেসক্লাবের সামনে এ ধরনের পরিস্থিতিতে বেশি বিপাকে পড়েন গণমাধ্যমকর্মীরা। নিজ নিজ অ্যাসাইনমেন্টে আয়োজক সংগঠনের কে কি বলছেন, তা বুঝতে পারা ছিল কঠিন কাজ। তার মধ্য থেকেই যে যতটুকু পেরেছেন কাজ চালিয়েছেন। একজন গণমাধ্যমকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কিছু করার নেই, মুখ নাড়াচাড়া দেখে অনুমান করছি বক্তারা কে কি বলছেন।’ অনুষ্ঠান আয়োজনকারীদের মধ্যেও ছিল হতাশা।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং নারায়ণগঞ্জের অ্যাসিডদগ্ধ ইয়াসমিন আক্তারের হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধনের আয়োজন করে এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন। মানববন্ধনে ইয়াসমিনের মা জায়েদা বেগম কান্না ও ক্ষোভ মিশিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। পাশেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (জাসদ) তরুণ নেতারা পয়লা বৈশাখে নারী নিপীড়নকারীদের গ্রেপ্তার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিরাপত্তা জোরদারের দাবিতে সোচ্চার কণ্ঠে বিভিন্ন দাবি জানাচ্ছিলেন।

এখানেই শেষ নয়, বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের এমবিবিএস ও বিডিএসের ২০১৩-১৪ বর্ষের শিক্ষার্থীরা ভর্তি রেজিস্ট্রেশনের দাবিতে সোচ্চার। জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন আয়োজন করেছে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ নিট ওয়্যার শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে প্রতীক অনশন কর্মসূচির। এ কর্মসূচিতে ৮১ জন শ্রমিকের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, কারখানা থেকে বের করে দেওয়া ১৬০ (ওই ৮১ জনসহ) জনের চাকরিতে পুনর্বহালের মতো গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে সোচ্চার ছিলেন প্রতিনিধিরা।

৫০ হাজার টাকার বেশি খরচ করে ভর্তি হলেও (দুই বছরের শিক্ষা খরচ নির্ধারণ করে) প্রথম বর্ষে ফাইনাল পরীক্ষায় ২৫ জন ছাড়া অন্যদের অকৃতকার্য তালিকায় রাখা হয়েছে। ফলে ঢাকা বিজ্ঞান কলেজের ২৩২ জন ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানের ইউনিফরম গায়ে দিয়েই শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করছে। বিজয় হাজরার নামে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদের ব্যানারে তুলনামূলক কম জনবল নিয়ে একটি মানববন্ধনও সেখানে হয়েছে।

এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী এ কে আজাদ বলেন, ‘পুলিশ কমিশনার বরাবর মানববন্ধন করার জন্য আবেদন করি। সেই চিঠির কপি শাহবাগ থানায় নিয়ে গেলে তারা গ্রহণ করে। তবে এ আয়োজনের জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের কারও কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। আমাদের মানববন্ধনে নারায়ণগঞ্জ থেকে ইয়াসমিন আক্তারের তিন সন্তান, মা, ভাইসহ অন্যরা এসেছেন। তাঁরা বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেছেন। প্রেসক্লাবের সামনের পরিবেশ এমন ছিল যে সেই বক্তব্য গণমাধ্যমকর্মীরা বুঝতে বা শুনতে পেরেছেন কি না, তা নিয়েই সন্দেহ দেখা দিয়েছে।’ এক সঙ্গে কয়টি সংগঠন এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবে, তার একটি নিয়মনীতি থাকা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জানতে চাইলে জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘প্রেসক্লাবের ভেতরে কোনো অনুষ্ঠান করতে চাইলে প্রেসক্লাবের অনুমতি নিতে হয়। তবে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় হলে তার দায়দায়িত্ব ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি)। তবে এ ক্ষেত্রে একটি নিয়মনীতি থাকলে ভালো হয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ