পুলিশে অবরুদ্ধ নয়াপল্টন

police পুলিশ নিরাপত্তাসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিকেল সাড়ে চারটা। পল্টন জামে মসজিদের পাশের গলি দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হতে গিয়ে পুলিশের ব্যারিকেডের কারণে আটকে পড়লেন ব্যবসায়ী তৌফিকুল ইসলাম। গন্তব্য শান্তিনগর মোড়। পুলিশের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা–কাটাকাটি হলো তাঁর। পুলিশের উপস্থিত সদস্যরা ওপর থেকে নিষেধ থাকার কারণে তাঁদের অপরাগতার কথা জানালেন।
মোটরসাইকেল ঘুরিয়ে যেতে যেতে তৌফিক বলছিলেন, ‘সরকারের ভাবমূর্তি বাড়ছে খুব।’
শুধু ওই গলিই নয়। নয়াপল্টনের সবগুলো গলির মুখ একইভাবে আটকে রেখেছিল পুলিশ। কাকরাইলের স্কাউট বিল্ডিংয়ের সামনে থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত পুরো রাস্তা এবং এর আশপাশের গলিগুলো আজ সারা দিন কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছিল পুলিশ। এ সময় এ রাস্তা এবং আশপাশের গলি দিয়ে কোনো গাড়ি, মোটরসাইকেল, রিকশা এমনকি সাইকেলও চলতে দেওয়া হয়নি। বাধা দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের চলাচলেও।
আশপাশের গলিতে কাউকে দাঁড়াতেও দেয়নি পুলিশ। বিএনপি অফিসের ঠিক উল্টো দিকের গলিতে দাঁড়িয়ে থাকলে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনজনকে লাঠিপেটা করে বাড়ির ভেতর ঢুকিয়ে দেয় পুলিশ।
কথা হয় পল্টন এলাকার বাসিন্দা মিজান মোক্তাদেরের সঙ্গে। পেশায় অ্যাডভোকেট মিজান বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে জায়গায় জায়গায় পুলিশ জানতে চাচ্ছে, কই যাই, কোথায় যাই?’ কেন বের হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী আর করা। কাজ তো করতে হবে। ক্লায়েন্ট ফোন দিছে, তাই বের হলাম।’
একটি খাবার দোকান ও একটি ফার্মেসি ছাড়া বন্ধ ছিল এ এলাকার সব দোকান ও বিপণিবিতানও। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশেই কাসফিয়া ভবনের কলাপসিবল গেইট ছিল লাগানো। এ ভবনে একটি সরকারি অফিস ও একটি ডায়গনস্টিক সেন্টার আছে। গেইটে থাকা দারোয়ান বলেন, ‘পুলিশ বলে গেছে গেইট বন্ধ রাখতে।’
বিএনপি অফিসের ঠিক উল্টোপাশে শেলটেক সুপ্রিম বিল্ডিং। দুপুর ১২টার দিকে দুজন ফটোসাংবাদিক ওই ভবনের ছাদে উঠে ছবি তুলতে চাইলে বাধা দেন ভবনের দারোয়ান। পরে ভবনের ফ্ল্যাট মালিক সমিতির একজন কর্মকর্তাসহ আসেন বিএনপি অফিসের ভেতরে বসে থাকা পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিতে। পুলিশের একজন সিপাইকে সঙ্গে দিয়ে ছাদে ওঠার অনুমতি দেওয়া হয় তাঁদের। পরে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে বাসার দারোয়ান জানান, পুলিশ বলে দিয়েছে বাইরের কোনো লোক এবং সাংবাদিকদের বাসার ছাদে উঠতে না দেওয়ার জন্য। ওই কর্মকর্তাও স্বীকার করেন একই কথা, তবে নাম প্রকাশ করতে চাননি তিনি।
বিএনপি অফিসের এক বিল্ডিং পর ‘আদি কড়াই গোশত’ রেস্টুরেন্ট এবং রেস্টুরেন্টটির উল্টো পাশে থাকা ‘লিভিং ইন রেস্তোরাঁ’। বন্ধ রেস্টুরেন্ট দুটির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল রেস্টুরেন্টের কয়েকজন কর্মচারী। নাম প্রকাশ না করে তাঁরা বলেন, পুলিশের নিষেধ থাকায় বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে লিভিং ইনের পাশের ক্যাফে পল্টন হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট খোলা ছিল। ওই রেস্টুরেন্টটি দেখিয়ে খোলা কেন জানতে চাইলে ওই কর্মচারী বলেন, ‘ওরা কেমনে খোলা রাখছে তো বলতে পারি না। কাইল পুলিশ আইসা বলে গেছে বন্ধ রাখতে। এহন তো দেখি ওদেরটা খোলা।’
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে উপস্থিত একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে নিরাপত্তার জন্য পথচারীদের বাধা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে দোকান বন্ধ রাখার ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ