এখন মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক : প্রধানমন্ত্রী

sheikh hasina shekh শেখ হাসিনামনির হোসেন মিন্টু, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিএনপি​র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আন্দোলনের হুমকি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এখন তারা দেশের একটা মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক, এর পরিণতি কেমন হয়।’

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ইতালি সফর-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলনের হুমকি উনি (খালেদা জিয়া) তো অনেক দিলেন। তাদের আন্দোলন হলো মানুষ খুন করার আন্দোলন। তারা তখন (৫ জানুয়ারির আগে) যে কাজটি করতে পেরেছে, এখন সেটা পারবে না। তখন ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এখন নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায়। এখন তারা দেশের একটা মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক না এর পরিণতি কী হয়। এখন তাদের (জনগণ) কিছু হবে না, এটাই মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই।’

খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরার দিন হরতাল দেওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চোরের মনে পুলিশ পুলিশ। হরতাল ডাকা হয়, যেন আদালতে হাজিরা না দিতে হয়। ওনার এত ভয় কিসের জন্য। নির্দোষ হলে আদালতে আসেন। আমি তো আদালতে হাজিরা দিতে ভয় পাইনি। মামলার তারিখ আসলেই উনি হুমকি-ধমকি দেন।’ পলায়নপর মনোবৃত্তি বাদ দিতে তিনি খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে হাসিনা বলেন, ‘বিদেশে বিভিন্ন নির্বাচন জিতে আসছি। উনি কি এটা দেখেন না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে সরকার।
আসেম সম্মেলনে উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সম্মেলনে মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কানেক্টিভিটির বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে করে যেন প্রতিটি দেশ লাভবান হতে পারে। মূলত এই এজেন্ডা ছিল জাতিসংঘের। এ ছাড়া জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা উন্নত দেশগুলোতে আমি প্রস্তাব দিয়েছি—সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করবেন না। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদে জড়িতদের কোনো ধর্ম নেই। জঙ্গি জঙ্গিই, তাদের কোনো বর্ডার নেই।’

সাংবাদিকরা কৃপণ!
প্রশ্নকারী সাংবাদিকরা ইন্টার-পার্লামেন্ট ইউনিয়ন (আইপিইউ) ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্ট অ্যাসোসিয়েশনে (সিপিইউ) বাংলাদেশের বিজয় নিয়ে প্রশ্ন না করায় সাংবাদিকদের কৃপণ বলে টিপ্পনি কাটেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আইপিইউ ও সিপিএতে জয়ী হলাম। কোনো সাংবাদিক একটু অভিনন্দনও জানাল না। সাংবাদিকরা এতো কৃপণ, আগে জানতাম না।’
আইপিইউ ও সিপিইউতে বাংলাদেশ জয়ী হওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওখানে কারচুপির কোনো সুযোগ ছিল না। মাত্র এক সপ্তাহের গ্যাপে পৃথিবীর কোনো দেশ আইপিইউ ও সিপিইউ এর মতো দুটো প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে বিজয়ী হয়নি। যারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সমালোচনা করেছেন—তাঁদের যে দূরদর্শিতার অভাব, সেটা প্রমাণ হয়েছে। বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা কথা বলছে। কিন্তু তাদের রাষ্ট্রপ্রধানরা একটা প্রশ্নও তোলেনি। প্রত্যেকে আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছে। তারপরও ওই নির্বাচনে কেন আনকনটেস্ট (১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত) অনেক উকিল এটা নিয়ে মামলা করতে যায়।’

বিদেশে প্রশ্ন নয় প্রশংসা ও অভিনন্দন পেয়েছি
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ যে আর্থিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে, সেটা প্রমাণ হয়েছে। যারা এখনো বলে যাচ্ছে—কূপমণ্ডূকতায় ভুগছে। নয়তো বিশেষ উদ্দেশ্যে বলছে। আপনারা কী এটা নিয়ে গর্ব করবেন না। বাংলাদেশ যে পারে সেটা প্রমাণ করেছি।’ পুতিনের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক আলাপ হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এখন পার্লামেন্টে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রয়েছে। এখন খিস্তিখেউর নেই। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। যে দল নির্বাচনে নেই, সেই দল নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নাই। বিদেশে কারোর কাছ থেকে প্রশ্ন পাইনি, সবার প্রশংসা ও অভিনন্দন পেয়েছি।’

যমুনায় তো সম্রাট শাহজাহান যাবে
প্রধানমন্ত্রীকে টক শো তে যাওয়ার আমন্ত্রণের বিষয়ে এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি অতো টক টক কথা বলতে পারব না। মধ্য রাতে জেগে থাকতে পারি না। কার বিরুদ্ধে কথা বলব।’ যমুনায় যেতে পারেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘যমুনায় যাওয়ার ইচ্ছা নাই। ওখানে তো সম্রাট শাহজাহান যাবে।’

লতিফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এটা ঠিক না
লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ২৬ অক্টোবর ইসলামি দলগুলোর হরতাল আহ্বানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেইনি, এটা ঠিক না। যখন ঘটনা ঘটে তখন আমি প্লেনে। কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। শোকজ করেছি। ওয়ার্কিং কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শোকজের উত্তর আমাদের জেনারেল সেক্রেটারির কাছে রয়েছে। কাল ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। আর যে দেশেই নেই, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব কীভাবে? এ জন্য হরতাল ডাকার তো যৌক্তিকতা নেই, প্রয়োজন নেই। আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে, ব্যবস্থা নিয়েছি। যথাযথ ব্যবস্থা যা যা নেওয়ার সেটা নিয়েছি।’
বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যারা খুনি, যারা খুনিদের সঙ্গে হাত মেলায়, তাদের সঙ্গে কিসের আলোচনা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ