বিনা টেন্ডারে কাজ চাচ্ছে চীন

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: সীতাকুণ্ড-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ের ২৩ হাজার কোটি টাকার নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বিনা টেন্ডারে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে দিতে সুপারিশ করেছে ঢাকার চীনা দূতাবাস।

চীনের জিটুজি ঋণে বাংলাদেশে কোন কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে তা নির্ধারণ করে গত বছরের অক্টোবরে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। সড়ক পরিবহন সচিব এম এ এন ছিদ্দিক জানান, এ তালিকায় ‘সীতাকুণ্ড থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ও সমুদ্র তীর রক্ষা’ প্রকল্পও রয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের গ্রামীণ অঞ্চল শহরের সঙ্গে যুক্ত হবে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম) অর্থনৈতিক করিডোরে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। সড়কপথে আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ সহজতর হবে। এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, সীতাকুণ্ড অথবা মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

সীতাকুণ্ড থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। গত ৬ মে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন করেন। সড়কটি নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনী। এক্সপ্রেসওয়ের আদলে সীতাকুণ্ড থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ প্রকল্পের প্রাথমিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) অনুমোদন করেছে পরিকল্পনা কমিশন।

গত ৯ মে ঢাকায় চীনা দূতাবাসের ইকোনমিক ও কমার্শিয়াল কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) চিঠিতে জানানো হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৩১৯ কোটি ৬৬ লাখ ডলার বা প্রায় ২৫ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে জিটুজি ভিত্তিতে ২৮৬ কোটি ৫৫ লাখ ডলার ঋণ দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক। অবশিষ্ট ৩৪ কোটি ডলার জোগান দেবে বাংলাদেশ। ঋণের ১৫ শতাংশ (জিসিএল) বা প্রায় ৪৩ কোটি ডলার সহজ শর্তে দেবে চীন। বাকি ৮৫ শতাংশ (পিবিসি) অর্থাৎ ২৪৩ কোটি ডলারের পণ্য কিনতে হবে চীন থেকে।

তবে চীনের এ প্রস্তাবে রাজি নয় ইআরডি। ১১ মে ইআরডির উপসচিব একেএম মতিউর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে চীনা দূতাবাসের ইকোনমিক ও কমার্শিয়াল কাউন্সিলরের কার্যালয়কে জানানো হয়, প্রকল্প ব্যয় কিছুতেই ২৮৬ কোটি ৫৫ লাখ ডলার বা প্রায় ২২ হাজার ৯২৪ কোটি টাকার বেশি হতে পারবে না। আলোচনা সাপেক্ষে ব্যয় নির্ধারণ করে ঠিকাদারের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করা হবে। চীন ও বাংলাদেশের প্রস্তাবে প্রকল্প ব্যয়ে পার্থক্য আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি।

জিটুজি ঋণের শর্তানুযায়ী, এর আগে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পে বিনা দরপত্রে (সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি) ঠিকাদারি কাজ পেয়েছে চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব প্রকল্পে উচ্চ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ঋণের টাকাও সময়মতো ছাড় করা হয় না। ফলে প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়িত হয় না। তাই বিনা দরপত্রে কাজ দেওয়ার পদ্ধতি থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে জিটুটি ঋণের প্রকল্পে লিমিটেড টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। মেরিন ড্রাইভ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে ‘নিগোশিয়েটেড টেন্ডারিংয়ের’ মাধ্যমে।

সড়ক পরিবহন সচিব এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পটি জিটুজি ঋণে বাস্তবায়ন করা হবে। তাই চীন ঠিকাদার মনোনয়নের সুপারিশ করতেই পারে। কিন্তু বাংলাদেশ আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। নতুন নীতিতে (লিমিটেড টেন্ডারিং) ঋণদাতা দেশ একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম সুপারিশ করবে। বাংলাদেশ সেখান থেকে একটি প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেবে।’

তবে ইআরডির উপসচিব একেএম মতিউর রহমান বলেন, মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পে আগের পদ্ধতিতেই ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বরের পর যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেগুলোর জন্য লিমিটেড টেন্ডারিং প্রযোজ্য হবে। এর আগের যে প্রকল্প রয়েছে সেগুলোতে নিগোশিয়েটেড টেন্ডারিংওয়ের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। আলোচনা সাপেক্ষে ব্যয় নির্ধারণ করা হবে। মেরিন ড্রাইভ ৩০ নভেম্বরের আগের প্রকল্প।

এ যুক্তিতে মেরিন ড্রাইভেও বিনা দরপত্রে কাজ পেতে পারে ‘চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড’। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজও এ প্রতিষ্ঠানকে বিনা টেন্ডারে দিতে সুপারিশ করেছে চীন। এ প্রকল্প ঝুলে রয়েছে ব্যয় নির্ধারণের প্রশ্নে। ২২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ব্যয় প্রাক্কলন করেছে ১০ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। চায়না হারবার ব্যয় প্রস্তাব করে ১৬ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ এতে রাজি হয়নি। গত মার্চে চীনা প্রতিষ্ঠানটি ব্যয় প্রস্তাব করে ১৪ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা, যা সওজের প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে প্রায় চার হাজার ২০০ কোটি টাকা বেশি।

জিটুজি ঋণের দুই মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের কাজ টেন্ডার ছাড়াই পেয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো। চীনের মনোনীত প্রতিষ্ঠান কাজ পেলেও ঋণের টাকা দিচ্ছে না দেশটি। গত বছরের অক্টোবরে ঋণচুক্তি সই হওয়ার পরও কর্ণফুলী প্রকল্পে এখনও টাকা দেয়নি চীন। ঠিকাদার নিয়োগের পর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও ঋণচুক্তি সই হয়নি পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পে। এতে দুই প্রকল্পেই কাজ আটকে আছে। ঋণের টাকা না পাওয়ায় চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা টাকা ব্যয় করা যায়নি।

সূত্র: সমকাল।

Leave a Reply

Facebook
%d bloggers like this:
ব্রেকিং নিউজ