হাদিকে গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত বাইক হোন্ডা হর্নেট, রিমান্ডে সুজুকি জিক্সার মালিক

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (১৭ ডিসেম্বর) : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের ধরন ও নম্বর নিয়ে একাধিক অসঙ্গতি সামনে এসেছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেলেও যে হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি ছিল হোন্ডা হর্নেট, তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে ভিন্ন নম্বরের একটি সুজুকি জিক্সার মোটরসাইকেলের কাগজপত্রভুক্ত মালিককে।

ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুর আনুমানিক আড়াইটার দিকে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে। রিকশাযোগে যাওয়ার সময় শরীফ ওসমান হাদির ওপর মোটরসাইকেলে আসা দুই ব্যক্তি হামলা চালায়। তাদের একজন খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৬ ডিসেম্বর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়।

ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে র‍্যাব-২ একটি মোটরসাইকেলের নম্বর শনাক্ত করে। সেই সূত্রে আব্দুল হান্নান নামে একজনকে আটক করা হয় এবং পরে পল্টন থানায় হস্তান্তর করে তার বিরুদ্ধে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

তবে অনুসন্ধানে উঠে আসে ভিন্ন চিত্র। সিসিটিভি ফুটেজে যে মোটরসাইকেলটি দেখা যায়, সেটি ছিল হোন্ডা হর্নেট মডেলের এবং নম্বর ছিল ঢাকা মেট্রো-ল ৫৪-৬৩৭৬। কিন্তু যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার নামে কাগজে-কলমে রয়েছে ঢাকা মেট্রো-ল ৫৪-৬৩৭৫ নম্বরের একটি সুজুকি জিক্সার এসএফ মোটরসাইকেল। নম্বরের শেষ অঙ্ক ও মোটরসাইকেলের মডেল—দুটিতেই স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে।

আরও প্রশ্ন উঠেছে নম্বর প্লেটের ভাষা নিয়েও। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা নম্বর প্লেটটি ইংরেজিতে লেখা ছিল। অথচ বিআরটিএর নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশে ইস্যু করা সব ডিজিটাল নম্বর প্লেটই বাংলায় লেখা হয়। বিআরটিএর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ভুয়া বা পরিবর্তিত নম্বর প্লেট ব্যবহার করতে পারে।

এদিকে আব্দুল হান্নানের স্ত্রী দাবি করেছেন, তার স্বামীর কখনোই হোন্ডা হর্নেট মোটরসাইকেল ছিল না। তিনি যে সুজুকি জিক্সার এসএফ ব্যবহার করতেন, সেটিও কয়েক মাস আগে বিক্রি করা হয়। তবে মালিকানা আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর না করায় কাগজে-কলমে গাড়িটি এখনো তার নামেই রয়ে গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই মালিকানা হস্তান্তর না করাই হান্নানের জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়েছে। বর্তমানে মোটরসাইকেলটি অন্য একজন ব্যবহার করলেও কাগজপত্রে নাম থাকায় তিনি সন্দেহভাজন হয়ে পড়েন।

গ্রেপ্তারের সময় ও স্থান নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে। র‍্যাব বলছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিকেলে তাকে আটক করা হয়। তবে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ভোরের দিকে মোহাম্মদপুরের চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকার বাসা থেকেই সাদা পোশাকে কয়েকজন ব্যক্তি তাকে নিয়ে যান।

পল্টন থানার তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত হাদিকে গুলির ঘটনায় আব্দুল হান্নানের সরাসরি সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রিমান্ড শেষে আদালতে তার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

উল্লেখ্য, এ ঘটনায় ফয়সাল করিম নামে একজনকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকেও আটক করা হয়েছে।

ঘটনার তদন্তে মোটরসাইকেল, নম্বর প্লেট ও সিসিটিভি ফুটেজের অসঙ্গতি নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—হামলাকারীরা কি পরিকল্পিতভাবে ভুয়া নম্বর ব্যবহার করে তদন্তকে ভিন্ন পথে নেওয়ার চেষ্টা করেছে?

মনোয়ারুল হক/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ