পুঁজিবাজার মূলধন কমেছে ৬ হাজার কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (২ নভেম্বর) : দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার চেয়ে বেশি। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসই বাজার মূলধন প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। সেই সঙ্গে কমেছে মূল্যসূচক। তবে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৭৭টি শেয়ার ও ইউনিটের। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৬টি শেয়ার ও ইউনিটের। আর ১৭৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৪৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে।
আইসিবির চেয়ারম্যান আবু আহামেদ বলেন, ‘গত সপ্তাহে বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা গেলেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুরোপুরি ফেরেনি। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে, তবে লেনদেনের পরিমাণ এখনো আশানুরূপ নয়। মূলত, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের তারল্যসংকট এবং বৈদেশিক মুদ্রার চাপ বাজারে প্রভাব ফেলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা এখন অপেক্ষমাণ অবস্থায় আছেন-সরকারি নীতিগত দিকনির্দেশনা ও সুদের হারের স্থিতি দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে চান। যদি আগামী সপ্তাহে ব্যাংক খাত ও আর্থিক খাতে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়, তাহলে সূচক ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।’
গত সপ্তাহের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৫ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা বা দশমিক ৮২ শতাংশ।
তার আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ৬ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। তার আগের দুই সপ্তাহে কমে যথাক্রমে ১৭ হাজার ৮৪১ কোটি ও ৭ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই সপ্তাহে ২৫ হাজার কোটি টাকা কমার পর ডিএসইর বাজার মূলধন ৬ হাজার কোটি টাকা বাড়ে।
বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি ডিএসইতে প্রধান মূল্যসূচকও কমেছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ২৭ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৪ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৩০ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৬০ শতাংশ। তার আগের দুই সপ্তাহে কমে ১৬৪ দশমিক ৩০ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ১৩২ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
অপর দুই সূচকের মধ্যে ইসলামি শরিয়াহ্ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ৫ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৪ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২ দশমিক ২৬ পয়েন্ট বা দশমিক ২১ শতাংশ। তার আগের দুই সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪৭ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং ৩৭ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ।
বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ১০ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৫২ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৩০ দশমিক ১৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। তার আগের দুই সপ্তাহে কমে ৬৫ দশমিক ১২ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ৪৮ দশমিক ৮০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
এদিকে গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনের গতি কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৫৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। তার আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪২৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ২৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বা ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খান ব্রদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং, রবি, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, সামিট এলায়েন্স পোর্ট, সিটি ব্যাংক এবং সোনালী পেপার।
