সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে দুটি আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসি নিউজ, (১৮ সেপ্টেম্বর) : সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯ এবং নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১ এই দুটি আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। একই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট অর্থসংক্রান্ত কয়েকটি আইন সংস্কারের প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজঁগাও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এসব প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, আজকের সভায় নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট দুটি আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়— একটি নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯ (২০০৯ সালের ৫ নম্বর আইন) সংশোধন, অপরটি নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ১৩ নম্বর আইন) সংশোধন।

প্রেস সচিব বলেন, এই দুই আইন সংশোধনের ফলে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে এবং নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যাবে। বিশেষ করে নির্বাচনী দায়িত্বে অবহেলা করলে শাস্তির বিধান আরও স্পষ্ট হবে।

শফিকুল আলম জানান, নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১-এর সংশোধনে ধারা ২, ধারা ৫ ও ধারা ৬-এ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন কর্মকর্তার সংজ্ঞা নতুনভাবে নির্ধারণ, শৃঙ্খলামূলক শাস্তি সংক্রান্ত ধারা হালনাগাদ এবং নতুন উপধারা সংযোজন ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

অন্যদিকে, উপদেষ্টা পরিষদ আজ এনবিআরের উদ্যোগে প্রণীত ‘অর্থসংক্রান্ত কতিপয় আইন (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এর আওতায় মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ সংশোধন করে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষ আদেশ দ্বারা ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানের বিধান করা হয়েছে। পাশাপাশি আয়কর আইন ২০২৩-এ সংশোধনের মাধ্যমে সরকারি সিকিউরিটি বা অনুমোদিত সিকিউরিটিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানি করদাতার উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত বাস ও পরিবহন খাতে কর সংগ্রহকে চূড়ান্ত করযোগ্য আয় হিসেবে গণনা করার বিধান সংযোজন করা হয়েছে।

প্রেস সচিব আরও জানান, বৈঠকে আজ সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সভায় জানানো হয়, পূর্ববর্তী ব্যাচে গৃহীত ১২১টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৭৭টি সংস্কারের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। এর মধ্যে ২৪টি ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৪টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে, আর বাকিগুলো দ্রুতগতিতে বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সভায় নির্দেশ দিয়েছেন—প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কারের পাশাপাশি নিজেদের উদ্যোগে সম্পন্ন সংস্কারগুলোর একটি তালিকা দ্রুত প্রস্তুত করে জমা দেবে। আগামী মাসের মধ্যে এসব তথ্য একত্র করে একটি সংকলন প্রকাশ করা হবে, যাতে সংস্কারের পূর্ণ চিত্র সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।

শফিকুল আলম জানান, আজকের বৈঠকে সংস্কার নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা হয় এবং আশা করা হচ্ছে আগামী মাসের শুরুতেই মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তাদের অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দেবে। এরপর ক্যাবিনেট বিভাগ সেটি একটি বুকলেট আকারে প্রকাশ করে সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেবে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ