ঘুমের মধ্যে চিরনিদ্রায় হলিউড কিংবদন্তি রবার্ট রেডফোর্ড

বিনোদন প্রতিবেদক, এবিসি নিউজ, ঢাকা (১৭`সেপ্টেম্বর) : হলিউড কিংবদন্তী এবং অস্কারজয়ী অভিনেতা ও নির্মাতা বার্ট রেডফোর্ড মারা গেছেন। মঙ্গলবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রোভো শহরের নিজ বাড়িতে ৮৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। রেডফোর্টের প্রকাশক সিন্ডি বার্গারের বরাতে এই খবর নিশ্চিত করেছে মার্কিন গণমাধ্যম এনবিসি নিউজ।

সিন্ডি বার্গার জানিয়েছেন, ঘুমের মধ্যেই শান্তিপূর্ণভাবে তিনি মারা গেছেন। হলিউড সিনেমা জগতের কিংবদন্তি বরার্ট রেডফোর্ড ছিলেন ১৯৬০ ও ৭০ দশকের অন্যতম জনপ্রিয় তারকা। তার অভিনয়, স্নিগ্ধ হাসি ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়। অভিনয়ের পাশপাশি পরিচালক হিসাবেও সফল ছিলেন তিনি।

চার্লস রবার্ট রেডফোর্ড জুনিয়র। একটি নাম, একটি অধ্যায় এবং একটি অনুপ্রেরণার নাম। বড় পর্দার মোহনীয় নায়ক থেকে অস্কারজয়ী পরিচালক রেডফোর্ড ছিলেন এমন এক শিল্পী, যাঁর সিনেমা শুধু গল্প বলেনি, আমেরিকাকে আয়নায় নিজের মুখ দেখিয়েছে। বেরিয়ে এসেছেন গল্প বলার চিরায়ত ঢং থেকেও।

১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা মনিকায় জন্ম রেডফোর্ডের। আমেরিকান একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টসে পড়াশোনা শেষে তিনি ১৯৫৯ সালে ‘টেল স্টোরি’ নাটকের মাধ্যমে ব্রডওয়েতে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৬৩ সালে ‘বেয়ারফট ইন দ্য পার্ক’ নাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন।

এরপরই সেলুলয়েডের পর্দায় পথচলা শুরু রেডফোর্ডের। সত্তর দশকে তিনি হয়ে ওঠেন হলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক। ১৯৭৩ ‘দ্য স্টিং’ তাকে এনে দিয়েছিল অস্কারের সেরা অভিনেতা মনোনয়ন। ১৯৮০ সালে ‘অর্ডিনারি পিপল’ পরিচালনার জন্য তিনি জেতেন অস্কারের সেরা পরিচালক পুরস্কার।

১৯৯৪ সালে ‘কুইজ শো’ পরিচালনায় আবারও মনোনয়ন পান তিনি। ১৯৮৫ সালে তিনি ‘আউট অব আফ্রিকা’ সিনেমায় অভিনয় করেন। বক্স অফিসেও সফলতার পাশাপাশি সিনেমাটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ সাতটি বিভাগে অস্কার লাভ করে। তিনি তার শেষ চলচ্চিত্র ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য গান’ শেষ করার পর অবসরে যান তিনি।

দশকের পর দশক ধরে রেডফোর্ড ছিলেন হলিউডের রোমান্টিক মুখ। স্টুডিওগুলো তাঁকে যৌনতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরলেও, তাঁর রোমান্টিক চরিত্রগুলো প্রাণ পেত শক্তিশালী অভিনেত্রীদের সঙ্গে জুটি বাঁধার ফলে। জেন ফন্ডা, বারব্রা স্ট্রেইস্যান্ড, মেরিল স্ট্রিপ- তাঁদের সঙ্গে রেডফোর্ডের রসায়ন ছিল অনবদ্য।

তিনি অভিনয় করেছেন ‘বাচ ক্যাসিডি অ্যান্ড দ্য সানড্যান্স কিড’, ‘অল দ্য প্রেসিডেন্টস মেন’, ‘দ্য স্টিং’ এবং ‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’ এর মতো কালজয়ী সিনেমায়। তবে রেডফোর্ডের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভাল। এই ফেস্টিভাল তরুণ নির্মাতাদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে।

১৯৮১ সালে সানড্যান্স ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন, যার মাধ্যমে শুরু হয় সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভাল। এই ফেস্টিভাল এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করেছে। সানড্যান্সের মাধ্যমে সিনেমা জগতের অনেক নতুন প্রতিভা উঠে আসে, যেমন কুইন্টিন টারান্টিনো, পল থমাস অ্যান্ডারসন এবং স্টিভেন সোডারবার্গ।

চল্লিশের কোঠায় এসে পরিচালনায় হাত দেন রেডফোর্ড। প্রথম ছবিতেই ইতিহাস গড়েন। ‘অর্ডিনারি পিপল’ (১৯৮০), এক উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের মৃত্যুর পর ভাঙনের গল্প। এই ছবি তাঁকে এনে দেয় সেরা পরিচালকসহ চারটি অস্কার। তাঁর পরিচালনায় ছিল সংবেদনশীলতা, সূক্ষ্মতা এবং সাহস।

হলিউডের ‘সহজে বানাও, দ্রুত বিক্রি করো’ সংস্কৃতির বিপরীতে রেডফোর্ড দাঁড়িয়েছিলেন একা, কিন্তু অটল। তাঁর বিশ্বাস ছিল- সিনেমা শুধু বিনোদন নয়, এটি সময়ের সাক্ষী। শোক, দুর্নীতি, ব্যক্তি সঙ্কট- এই জটিল আবেগগুলো তিনি এমন ভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতেন, যা দর্শকের মনে দীর্ঘ প্রতিধ্বনি তুলতো।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ