একটি বিশেষ দল স্বাধীনতাযুদ্ধের মনগড়া ইতিহাস বলে চলেছে

khaleda zia বেগম খালেদা জিয়ামনির হোসেন মিন্টু, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আওয়ামী লীগের দিকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

দলটির প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেছেন, একটি বিশেষ দল স্বাধীনতাযুদ্ধের মনগড়া ইতিহাস বলে চলেছে। বিকৃত ইতিহাসকে শুদ্ধ করে বলতে গেলে বা চ্যালেঞ্জ করলে তারা তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। তথ্য-উপাত্ত দিয়ে কথা বললেও সুষ্ঠু জবাব না দিয়ে অশ্লীল গালাগাল করে, হুমকি দেয়।
আজ রোববার বিকেলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া এই অভিযোগ করেন। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের করণীয়’ শীর্ষক ওই আলোচনা ও মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া দাবি করেন, ইতিহাস বিকৃতির কারণ, স্বাধীনতাযুদ্ধে তাদের (আওয়ামী লীগ) ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সংকটকালে তারা ইতিহাস-নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছিল। রণাঙ্গনে জীবনবাজি রেখে তারা যুদ্ধ করেনি। ভারতে আশ্রিত জীবন কাটিয়েছে। তাই তারা ইতিহাসের সত্যের বদলে আবেগকে আশ্রয় করে নিজেদের ব্যর্থতা ও দুর্বলতা ঢাকতে চায়। স্বাধীনতার উষালগ্ন থেকেই স্বাধীনতাযুদ্ধের সাফল্যকে দলীয়করণ করার অপচেষ্টা শুরু হয় বলেও অভিযোগ করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘একটি দল সব সময় দাবি করে, তারা মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ সংগঠিত করেছে ও নেতৃত্ব দিয়েছে। তাদের দাবি যে কতটা অসার তা এখন সেই দলভুক্ত লোকদের লেখা বইপত্র এবং বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। কিন্তু সত্য কথা কেউ বললে তারা তার সঠিক ও তথ্যভিত্তিক জবাব না দিয়ে গালাগাল শুরু করে। তাদের ফরমায়েশি ইতিহাসের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করলেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরও তারা রাজাকার ও পাকিস্তানের চর বলে লেবেল এঁটে দিতে দ্বিধাবোধ করে না। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধকে এভাবে দলীয় সম্পত্তিতে পরিণত করা সম্ভব হবে না। ইতিহাস তার স্বাভাবিক গতিতেই চলবে। গালাগালি ও হুমকি দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করা যাবে না।’
খালেদা জিয়া দাবি করেন, ১৯৭১ সালের মার্চে আওয়ামী লীগের নেতাদের ব্যর্থতার পটভূমিতে জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ করেছিলেন। হানাদার বাহিনীর অধিনায়ক জানজুয়াকে হত্যা ও বাকিদের বন্দী করেছিলেন। বেতার মারফত স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন। তাঁর ঘোষণার মাধ্যমেই বিদ্রোহ উন্নীত হয়েছিল বিপ্লবে। প্রতিরোধযুদ্ধ উন্নীত হয়েছিল স্বাধীনতার যুদ্ধে।
খালেদা জিয়া বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এ দেশে অনেক রাজনীতি হয়েছে। তাঁদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। বিএনপি তা কখনো করবে না। বিএনপি মুক্তিযোদ্ধাদের ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে কখনো দলীয় রাজনীতির উপকরণ করতে চায় না। এ নিয়ে বিতর্কও কাম্য নয়।
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন তালিকা প্রণয়নের নামে যে ‘জঘন্য জালিয়াতি ও দলীয়করণের’ আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, তা পরিশুদ্ধ করা হবে। প্রকৃত কোনো মুক্তিযোদ্ধা তালিকার বাইরে থাকবেন না। যেসব মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবার বিপন্ন ও মানবেতর জীবন যাপন করছে, তাদের সমাজে সম্মানজনক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কারাগারে বিশেষ মর্যাদা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ ও আন্দোলন সংগঠিত করার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ন্যায়সংগত। আজ সেই ন্যায়সংগত বিদ্রোহ সংগঠিত করার সময় এসেছে।’
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘সকলের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ আহ্বানে তারা সাড়া দেয়নি। তাই আমাদের বসে থাকার আর কোনো উপায় নেই। দেশের জনগণ আন্দোলন চায়, পরিবর্তন চায়।’
আওয়ামী লীগকে স্বদেশি হানাদার আখ্যা দিয়ে শিগগির আন্দোলন শুরুর হুমকি দেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা অস্ত্রের মোকাবিলায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পথে নামব। আমাদের আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক, জনগণের আন্দোলন। জনগণের সেই আন্দোলনে স্বৈরাচারী, অবৈধ সরকার তাসেরঘরের মতো ভেসে যাবে।’
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ