ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১

sylet Shahjalal Universityমনির হোসেন মিন্টু, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, সিলেটঃ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে একজন নিহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ আহত হয়েছেন অন্তত সাতজন। ঘটনার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
নিহত শিক্ষার্থীর নাম সুমন দাস। তিনি সিলেট শহরের ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসনের (বিবিএ) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সংঘর্ষের পর গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে তিনি মারা যান।
সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিমাদ্রী শেখর রায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি অঞ্জন রায়সহ অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বেলা একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে জরুরি সিন্ডিকেট বৈঠক বসে। বৈঠকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেনের তথ্যমতে, আজ বিকেল চারটার মধ্যে ছাত্রদের এবং কাল শুক্রবার সকাল নয়টার মধ্যে ছাত্রীদের আবাসিক হল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকলেও এই সময়ে প্রথম বর্ষে ভর্তির কার্যক্রম চলবে।
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তৎপর রয়েছে। ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার এ কে এম রহমাতুল্লাহ দাবি করেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।
ছাত্রলীগ, পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্যাম্পাস সূত্রের ভাষ্য, আধিপত্য বিস্তার ও হল দখলকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী ও সহসভাপতি অঞ্জন রায়ের পক্ষের মধ্যে আজ এই সংঘর্ষ হয়েছে।

সংঘর্ষে সভাপতি পক্ষের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানের পক্ষের কর্মীরা। সহসভাপতি পক্ষের সঙ্গে যোগ দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য উত্তম কুমার দাসের সমর্থকেরা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, আজ সকাল ১০টার দিকে সঞ্জীবনের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা শাহ পরান ও বঙ্গবন্ধু হলে যান। তাঁরা হল থেকে অঞ্জনের পক্ষের নেতা-কর্মীদের বের করে দেন। এরপর অঞ্জনের অনুসারীরা সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ। একপর্যায়ে এই সংঘর্ষ ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকটি গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এরপর সভাপতি পক্ষের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে হলের দিক চলে যান। ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন সহসভাপতি পক্ষের নেতা-কর্মীরা।
দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উভয় পক্ষের মধ্যে আবারও উত্তেজনা দেখা দেয়। সঞ্জীবনের পক্ষ হলের দিকে এবং অঞ্জনের পক্ষ ক্যাম্পাসের দিক দিয়ে পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থান নেয়। দুই পক্ষের মধ্যে অবস্থান নেয় পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিমাদ্রী শেখর রায় বলেন, ‘দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। আমরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছি। তাদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন দাবি করেন, ‘আমরা আমাদের কর্মীদের হলে তুলে দিতে যাই। এ সময় প্রতিপক্ষ আমাদের ওপর হামলা করে।’
সহসভাপতি অঞ্জনের দাবি, সঞ্জীবনের নেতৃত্বে বহিরাগত লোকজন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ