জিএসপি ফিরে পাওয়া বাংলাদেশের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ

garments গার্মেন্টসসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) ফিরে পাওয়া বাংলাদেশের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বাংলাদেশের অর্থনীতিবীদরা। তাঁরা বলেছেন, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেধে দেওয়া সব শর্ত পূরণ করাও বাংলাদেশের জন্য কঠিন। তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ উত্তীর্ন হবে, এমন আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। তৈরি পোশাক কারখানার কাজের পরিবেশ এবং শ্রমিকের স্বার্থ ও নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্ক থাকার অভিযোগে গত বছরের ২৭ জুন বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিত করে ওবামা প্রশাসন। জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেঁধে দেওয়া ১৬ শর্তের মধ্যে ১৩টি শর্ত ইতিমধ্যেই পূরণ করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেছেন, বাকি ৩টি শর্ত শিগগিরই পূরণ করা হবে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণের দাবি করে তিনি বলেছেন, শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ উত্থাপিত হওয়া ১৯ গার্মেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাকি ৩টি শর্তের অন্যতম হচ্ছে ইপিজেড’এ শ্রম আইন পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন করা, বিশেষ করে ইপিজেড’এ শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকস্বার্থ সুরক্ষা ও শ্রমিকদের নিরাপত্তায় সংস্কারকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচলিত শ্রম আইন সংশোধন করা। এ ছাড়া গার্মেন্ট শিল্পের তদারকির জন্য দু’শ পরিদর্শক নিয়োগ, সকল কারখানা শ্রমিকদের ডাটা বেইজের আওতায় আনা। তবে শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ উত্থাপিত হওয়া ১৯ গার্মেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান জিএসপি ফিরে পাওয়া নিয়ে  বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বেঁধে দেওয়া সব শর্ত পূরণ বাংলাদেশের জন্য অনেক কঠিন। তবে অতীতে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার নজির আমাদের আছে। এই চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। দল-মত নির্বিশেষে এটা করতে আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে জিএসপি ফিরে পাওয়া নিয়ে যেন কোন রাজনীতি না হয়। এজন্য সরকারকে সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’ সেন্টার ফর ডয়লগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো বিশিষ্ট অর্থনীতিবীদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বেঁধে দেওয়া ১৬ শর্তের ১৩টি পূরণ করা হয়েছে। বাকি ৩টি শর্ত পূরণ খুবই কঠিন কাজ। বিশেষ করে শ্রমিকদের ডাটা বেইজের আওতায় আনা, শ্রম আইন সংশোধন ও ইপিজেডে শ্রম আইন বাস্তবায়ন করা সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। মালিক শ্রমিক রাজনীতিকদের নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে এই শর্ত পূরনে।’ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত বছর জিএসপি স্থগিতের সময় যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি রাজনৈতিক বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিয়েছিল। আমাদের উচিৎ হবে ১৬ শর্তের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে যাতে করে এই শর্তের সঙ্গে রাজনৈতিক শর্ত জুড়ে না দেওয়া হয়। সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও এই জিএসপি ফিরে পাওয়ার অভিযানে সঙ্গে নিতে হবে।’ উল্লেখ্য, জিএসপির আওতায় বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয় না। বাংলাদেশ জিএসপির আওতায় মূলত সিরামিক পণ্য, চশমা, তাঁবু, প্লাস্টিক ব্যাগ, উলের তৈরি পাপোশ ও শতরঞ্জি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ