আজ বিজয়া দশমী, সন্ধ্যার আগেই বিসর্জনের নির্দেশনা
নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসি নিউজ, (২ অক্টোবর) : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী আজ বৃহস্পতিবার। দশমীতে কৈলাসে (স্বামীর বাড়ি) ফিরে যাবেন দেবী দুর্গা। আজ সকালে হবে দশমীর বিহিত পূজা। পূজা শেষে হবে দর্পণ। এরপর শোভাযাত্রাসহকারে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসব। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সন্ধ্যার আগেই প্রতিমা বিসর্জনের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।
বিজয়া দশমী উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
শাস্ত্রমতে, দশমীর দিন সকালেই দেবী দুর্গাকে সিঁদুর, ফুল, ধান ও দূর্বা দিয়ে বরণ করা হয়। নারীরা সিঁদুর পরিয়ে দেন এবং তাকে মিষ্টি প্রদান করেন। এই বরণ পর্বে দেবীকে বিদায় জানানো হয়, যাতে তিনি আবার পরের বছর মর্ত্যলোকে ফিরে আসেন। নারীদের মধ্যে সিঁদুর খেলার আয়োজনও করা হয়, যা বিশেষ আনন্দের মাধ্যমে উদযাপিত হয়। এ সময় নারীরা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে দেন।
প্রতিমা বিসর্জন দশমীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। দেবী দুর্গার প্রতিমাকে শোভাযাত্রার মাধ্যমে পুকুর অথবা নদীতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিসর্জনের সময় ভক্তরা দেবীকে বিদায় জানাতে বিভিন্ন প্রার্থনা ও আরতি করেন। ঢাকের আওয়াজ, উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জন পর্ব খুবই আবেগঘন, কারণ এটি দেবীর মর্ত্য ত্যাগের প্রতীক। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে।
বিসর্জনের পর বিজয়া দশমীর আরেকটি বিশেষ রীতি হলো কোলাকুলি ও মিষ্টিমুখ। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতজনরা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন এবং মিষ্টি বিতরণ করেন। এই সময় একে অপরের মঙ্গল কামনা করেন এবং আশীর্বাদ চান।
এদিকে বিজয়া দশমীর দিন নদীপথে প্রতিমা বিসর্জনের সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সম্ভাব্য দুর্ঘটনা মোকাবিলায় কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কোস্টগার্ড মহাপরিচালক (ডিজি) রিয়ার অ্যাডমিরাল জিয়াউল হক। গতকাল বুধবার নারায়ণগঞ্জ শহরের রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
কোস্টগার্ড মহাপরিচালক বলেন, ‘ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের উপকূলীয় ও নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর মন্দির ও পূজামণ্ডপের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে কোস্টগার্ড। প্রতিমা বিসর্জনের স্থানগুলোতে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা মোকাবিলায় আমাদের বিশেষ ডুবুরি দল সর্বদা প্রস্তুত আছে।’
বিসর্জনের সময় নৌকায় যাতে অতিরিক্ত লোক না ওঠানো হয় এবং যারা সাঁতার জানেন না, তাদের নদীতে না নামার আহ্বান জানান তিনি।
অন্যদিকে গতকাল ছিল মহানবমী। মহানবমীতে মন্দির, মণ্ডপে যেন মিলেমিশে গেছে আনন্দ-বেদনা। দেবীর বন্দনায় ছিল ভিন্ন এক আবহ। পূজার উদযাপন আর দেবীকে বিদায়ের সুর বেজেছে ভক্তদের হৃদয়ে।
নবমী তিথি শুরু হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। সন্ধিপূজা হয় অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর সূচনার প্রথম ২৪ মিনিটজুড়ে। পুরোহিতদের মতে, মহানবমীতে ভক্তদের দেওয়া ষোড়শ উপাচারের সঙ্গে ১০৮টি নীলপদ্মে পূজা করা হয় দেবী দুর্গার। এ ছাড়া নীলকণ্ঠ, নীল অপরাজিতা ফুল ও যজ্ঞের মাধ্যমে মহানবমীর বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
মহানবমীর দিনে যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেওয়া হয়। ১০৮টি বেলপাতা, আমকাঠ, ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজা শেষে ভক্তরা দেবীর চরণে অঞ্জলি নিবেদন করেন।