নিজ বাড়ির সীমানা যেন সীমান্তের কাঁটাতার
নিজস্ব প্রতিবেদক (গাজীপুর), এবিসি নিউজ, (২০ সেপ্টেম্বর) : মই ও গাছ বেয়ে দেয়াল টপকে নিজ বাড়িতে যাতায়াত করছে ভুক্তভোগী নারী ও তার পরিবার। স্থানীয় এক প্রভাবশালীর কাছে জমি বিক্রি না করায় দীর্ঘ ৯ মাস ধরে একটি হতদরিদ্র পরিবারের বাড়ির চারপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন পঞ্চাশোর্ধ বিধবা নারী শামসুন্নাহার ও তার ছেলে। মই ও গাছ বেয়ে দেয়াল টপকে ঝুঁকি নিয়ে নিজ বাড়িতে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের।
ঘটনাটি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্বখণ্ড এলাকার সচিব গেট এলাকায়।
মা-ছেলের অভিযোগ, নামমাত্র দামে জমিটি কিনে নিতে উঠে পড়ে লাগেন নূরুল হুদা। কিন্তু প্রয়াত স্বামীর কেনা জমি শামসুন্নাহার বিক্রি করবেন না বলে নূরুল হুদাকে জানিয়ে দেওয়ার পর থেকে শুরু হয় অত্যাচার। ওই বাড়ির চার দিকেই নূরুল হুদার জমি। নিজের জমিতে বাঁশ, কাঠ ও তারের বেড়া দিয়ে সব পথ বন্ধ করে দেন। গৃহবন্দি হয়ে পড়েন শামসুন্নাহার ও দীপু। গত ৯ মাস ধরে শামসুন্নাহারকে বের হতে দিচ্ছেন না নূরুল হুদা। মই বেয়ে বাড়ির বাইরে বের হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন শামসুন্নাহার। কিন্তু কেউ তাঁকে গৃহবন্দি অবস্থা থেকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগের সুরে বললেন তিনি।
শামসুন্নাহার বলেন, ২০০৫ সালে জমি কিনে এখানে বাড়ি করেছি। ৫ বছর আগে মারা গেছেন আমার স্বামী আমিরুল ইসলাম। নূরুল হুদা চাইছেন এই জমিটি অন্য কোনো এক ধনাঢ্য লোককে কিনে দিতে। কারণ আমার বাড়ির চারপাশের সব জমি কিনে নিয়েছেন ওই লোকটি। শুধু আমাদেরটাই বাকি। তাতে রাজি না হওয়ায় গত ৯ মাস ধরে চারপাশে বাঁশ, কাঠ ও তারের বেড়া দিয়েছেন। বিশেষ কোনো দরকারে মই বেয়ে দেয়াল টপকে বাইরে বের হতে হয়, কিন্তু তা নিরাপদ না। তেড়ে আসেন নূরুল হুদা।
ভুক্তভোগী আরও বলেন- গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন করতাম। বাধ্য হয়ে সেগুলো বিক্রি করে ফেলেছি। সম্প্রতি নূরুল হুদা হুমকির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে ভয়ে দেয়াল টপকেও বের হই না। ঘরে চাল, ডাল, তেল, নুন কিছুই নেই। অনাহারে কাটছে আমাদের দিনগুলো।
শামসুন্নাহারের ছেলে সাইফুল ইসলাম দীপু বলেন, এত অমানবিক মানুষ হতে পারে কী করে! ৯ মাস ধরে আমাদের ঘরবন্দি করে রেখেছে। বাড়িছাড়া করতে কয়েকবার মাকে মারধর হয়েছে। কিন্তু মা বলছে, তিনি বাবার বসতভিটা ছেড়ে যাবেন না। প্রায় ২০ বছর আগে বাবা সাড়ে ৩ শতাংশ জমি কিনেছিলেন। জমির দাম বেড়ে গেছে। আমি এখন কারখানায় কাজেও যেতে পারি না। উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। বসতবাড়ির চারপাশে বেড়া। মই দিয়ে খুবই কষ্টে যাতায়াত করি। মার খুবই কষ্ট হয়। জমি ছেড়ে দিতে প্রতিদিন হুমকি দিচ্ছে। মা অসুস্থ হয়ে গেছেন।
অভিযুক্ত নূরুল হুদা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে বাধ্য নই। আমি তাদের রাস্তা দেব না, দেখি কে রাস্তা দেয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার কোনো কথা নেই।’
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, এর আগে একবার নূরুল হুদাকে নোটিশ করা হয়েছে। সাড়া দেননি। দ্বিতীয়বার নোটিশ করেছেন। আগামী সোমবার তাকে ডাকা হয়েছে। যদি এতেও সাড়া না দেন, নিয়মা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।