লাইফ সাপোর্টে লালন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন, মেডিকেল বোর্ড গঠণ
বিনোদন প্রতিবেদক, এবিসি নিউজ, (১৩`সেপ্টেম্বর) : দুদিন আগেই পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে দেশবরেণ্য লালনসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনকে। আজ শনিবার দুপুরে ছেলে ইমাম নিমেরি উপল জানালেন, তাঁর মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তাঁর ভাষ্যে, ‘ক্রিটিক্যাল’।
দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছেন ফরিদা পারভীন। কিছুদিন ধরে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, সপ্তাহে দুই দিন তাঁকে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। নিয়মিত ডায়ালাইসিসের অংশ হিসেবে ২ সেপ্টেম্বর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু ডায়ালাইসিসের পর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তখন চিকিৎসক তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। এর পর থেকে তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত বুধবার অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ফরিদা পারভীন যে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন, তার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ কুমার চক্রবর্তী আজ শনিবার দুপুরে বলেন, ‘ফরিদা পারভীনের কিডনি, ব্রেইন কাজ করছে না। ফুসফুসে সমস্যা আছে। হার্টে অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন আছে। রক্তের সংক্রমণ সারা শরীরে ছড়িয়ে গেছে। রক্তচাপ কম থাকার কারণে ডায়ালাইসিস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
আশীষ চক্রবর্তী বলেন, ‘ফরিদা পারভীনের সার্বক্ষণিক চিকিৎসার জন্য ছয় সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে। আজ থেকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে আছেন। এরপর বলা যাবে অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে।’
ফরিদা পারভীনের ছেলে ইমাম নিমেরি উপল বললেন, ‘ভেন্টিলেশনে আছেন, এরপর মায়ের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। চিকিৎসক জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সংকটাপন্ন।’
এর আগে ফরিদা পারভীনের শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে স্বামী যন্ত্রসংগীতশিল্পী গাজী আবদুল হাকিম বলেছিলেন, ‘সার্বিকভাবে তাঁর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। গত কয়েক মাসে চারবার আইসিইউতে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। ফুসফুস আর কিডনিজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন তিনি। শরীর প্রচণ্ড দুর্বল থাকে। উঠে দাঁড়ানোর মতো শক্তি পান না। হাঁটতেও পারেন না। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন ফরিদা পারভীন। ফুসফুসের সমস্যা ছাড়াও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি ও থাইরয়েড জটিলতা রয়েছে তাঁর।
১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে নজরুলসংগীত গাইতে শুরু করেন ফরিদা। ১৯৭৩ সালের দিকে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। সাধক মোকসেদ আলী শাহর কাছে ফরিদা পারভীন লালনসংগীতে তালিম নেন।
ফরিদা পারভীন ১৯৮৭ সালে সংগীতাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদক পান। এ ছাড়া ২০০৮ সালে তিনি জাপান সরকারের পক্ষ থেকে ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’ পুরস্কারও পেয়েছেন। সেরা প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন ১৯৯৩ সালে।
শিশুদের লালনসংগীত শিক্ষার জন্য ‘অচিন পাখি স্কুল’ নামে একটি গানের স্কুল গড়ে তুলেছেন তিনি।