ভিক্ষুক ফজিলার মাথা গোঁজার ঠাই রাজনীতির আগুনে পুড়ে ছাই

মেহ্দী আজাদ মাসুম, বিশেষ প্রতিনিধি, এবিসিনিউজবিডি (২ এপ্রিল ২০১৬),
নাটোর থেকে ফিরে : নির্বাচনী সহিংসতায় পুড়ে গেছে ভিক্ষুক ফজিলা বেগমের মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়স্থলটুকু। ১ এপ্রিল (শুক্রবার) নাটোরের লালপুরের বাকনাই গ্রামের বাসিন্দা ফজিলা বেগমের বাঁশের ঘেরা আর টিনের ছাউনির ঘরটি পুড়িয়ে দেয়া হয়। এটিই মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই ছিল তার।

বাকনাই গ্রামে ২ এপ্রিল (শনিবার) সকালে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো শুক্রবার সকালে ভিক্ষা করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ফজিলা। হঠাৎ নয়টার দিকে শতাধিক লোক হাতে লাঠি, ফালা নিয়ে পেছনের মাঠ দিয়ে তাদের গ্রামে ঢোকে। ফজিলার ঘরসহ দুটি বাড়িতে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় আরও কিছু বাড়িতে। আতঙ্কে সব বাড়ির লোকেরা পালিয়ে যান। যাননি কেবল ফজিলা।

হামলাকারীদের বারবার অনুরোধ করেন আগুন না লাগানোর জন্য। কিন্তু কেউই কথা শোনেনি মানুষের কাছে হাত পেতে জীবিকা নির্বাহ করা এই মানুষটির।

মুহূর্তেই চোখের সামনে বসতঘরটি পুড়ে ছাই হয়ে যায় ফজিলার। ঘরে থাকা হাঁড়ি-পাতিল, জামাকাপড়সহ টুকিটাকি যা ছিল সব পুড়ে ছাই। পুড়ে যায় তার ছোট সংসার, যে সংসারের একমাত্র সদস্যও তিনি। এতিম এই মানুষটির ঘরটুকু রক্ষায় পথচারীদের খবরে লালপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এলেও ততক্ষণে কিছুই পুড়তে বাকি ছিল না।

ফজিলার বাড়িতে ঢুকে দেখা গেল, বাড়ির ধ্বংসাবশেষের মধ্যে বসে কিছুক্ষন পর পর প্রলাপ করছেন। ধ্বংসস্তুপ থেকে কয়েকটি পোড়া ৫০০ টাকার নোট কুড়িয়ে এনে বলেন, ‘ভিক্ষা করে ২০ হাজার টাকা জমিয়েছিলাম, ধার শোধ করতে। সব শেষ।’

এবিসিনিউজবিডির এই প্রতিবেদককে ফজিলা আরো জানান, তিনি কোনো রাজনীতি বোঝেন না। নেতা বোঝেন না। তার বাড়ির পাশের আবদুল হান্নান ১ নম্বর লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন। প্রতিপক্ষ ইউসুফ আলী বিজয়ী হয়েছেন। এরপর আবদুল হান্নানকে শায়েস্তা করতে আসা সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হলো তার ঘরটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ