অপহরণের বর্ণনা দিলেন, কাঁদলেন কাউন্সিলর পারভীন

Gazipur Councilor Parvin Aktarরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, গাজীপুরঃ অপহরণের পরে উদ্ধার হওয়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর পারভীন আক্তার বলেছেন, বাবার হত্যা মামলা তুলে না নেওয়ার জন্যই তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল।

পারভীন আক্তার বলেন, ‘আমি এখন নিরাপদ নই। আজকের পর থেকে আমি আর কত দিন বেঁচে থাকব তার নিশ্চয়তা নেই। যেকোনো মুহূর্তে ওরা আমাকে মেরে ফেলতে পারে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।’ নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা বলতে বলতেই একসময় হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি।

গত শুক্রবার নিখোঁজ হওয়ার পরে গতকাল শনিবার পারভীনকে উদ্ধার করা হয়। আজ রোববার গাজীপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর পারভীন আক্তার তাঁকে অপহরণ করার ঘটনার বর্ণনা দেন।

কাউন্সিলর পারভীন আক্তার বলেছেন, ২০১১ সালে তাঁর বাবা চাঁন মিয়াকে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হত্যা করে। তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই মামলা চলছে। ওই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য কয়েকবার এলাকার সন্ত্রাসী হাজি দুলাল, জুয়েল ও সুমনসহ পাঁচ-ছয়জন লোক তাঁকে (পারভীন আক্তার) হুমকি দিয়েছে।

পারভীন আক্তার আরও বলেন, গত শুক্রবার দুপুরে একজন নারী তাঁকে জিরানি বাজার এলাকায় ডেকে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে কালো একটি মাইক্রোবাসে হাজি দুলাল, জুয়েল, সুমনসহ পাঁচ-ছয়জন মুখে রুমাল চাপা দিয়ে অজ্ঞান করে তাঁকে তুলে নেয়। ওই দিন রাত নয়টার দিকে তাঁর জ্ঞান ফেরে। তিনি দেখেন তাঁকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। ঘরে কয়েকজন নারী রয়েছেন। এ সময় পাহারায় থাকা নারীরা বাবার হত্যা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য পারভীন আক্তারকে চাপ দেন। মারধর করেন। কিন্তু পারভীন আক্তার রাজি না হওয়ায় আবার তাঁকে অজ্ঞান করে ফেলা হয়। পরে গাড়িতে করে পারভীন আক্তারকে আবার অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়িতে হাজি দুলাল পারভীন আক্তারকে বলেন, ‘তোরে অনেকবার বলেছি। মামলাটি তুইল্যা নিতে। তুই তুইল্যা নেস নাই। এখন তরে কে বাঁচাইব? তরে এখন মাইরা ফেলামু। কাউন্সিলর হওয়ার পরেও তরে কইসি। তুই শোনোসনি। আমরার পিছে লাইগ্যা রইছস।’

কাউন্সিলর পারভীন আক্তার বলেন, মাইক্রোবাসটি কোনদিকে যাচ্ছিল তা তিনি বুঝতে পারেননি। সন্ধ্যার দিকে পথের মধ্যে বেশ কয়েকজন পুলিশ দেখে অপহরণকারীরা গাড়ি ঘুরিয়ে তাঁকে অন্য আরেকটি রাস্তায় নিয়ে যায়। রাত আটটার দিকে তাঁকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া হয়।

পারভীন আক্তার বলেন, সেখানে একজন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক তাঁকে হবিগঞ্জের আউশকান্দি গ্রামের বাজারে রেখে যান। সেখান থেকে পরে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আব্দুল বাতেন বলেন, প্রথমে পারভীন আক্তারকে উদ্ধার করার বিষয়টি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু তাঁকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, এখন মূল কাজ হলো অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করা। এর মধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে।
পুলিশ সুপার আব্দুল বাতেন আরও বলেন, তাঁরা পারভীন আক্তারের নিরাপত্তা জোরদার করবেন।
জয়দেবপুর থানার পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আলম চাঁদ বলেন, সংবাদ সম্মেলন শেষে পারভীন আক্তার গাজীপুর আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান, জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান, গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা আমির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
পারভীন আক্তারের স্বামী মিনহাজ উদ্দিন এ ঘটনায় হাজি দুলাল, জুয়েল ও সুমনসহ পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ