নিখোঁজ মালয়েশীয় বিমানের ৩ দিন পরও হদিস নেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ মালয়েশীয় উড়োজাহাজটি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের ধূম্রজাল। ২৩৯ জন আরোহী নিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর প্রায় তিন দিন হয়ে গেলেও মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজটির সন্ধান বা ধ্বংসাবশেষ মেলেনি। বিমানটি উড্ডয়নের পর সম্ভবত পেছনের দিকে ফিরে আসছিল এবং এতে চুরি করা পাসপোর্টের দুজন যাত্রী ছিল—গতকাল রোববার এ ধরনের খবর প্রকাশিত হওয়ায় রহস্য নতুন মাত্রা পায়। এদিকে সন্ত্রাসবাদের আশঙ্কা খতিয়ে দেখতে তদন্তে যোগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই।

২২টি বিমান ও ৪০টি বিভিন্ন ধরনের নৌযান তন্নতন্ন করে খুঁজছে নিখোঁজ উড়োজাহাজটিকে। কিন্তু সাগরে তেলের স্তর ভাসতে দেখা ছাড়া এর ধ্বংসাবশেষের আর কোনো আলামত মেলেনি। ওই তেল বিমানটির কি না, তা-ও নিশ্চিত নয়। ঘটনাটি তদন্তে মালয়েশিয়ার নিজস্ব বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি এফবিআইসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও মাঠে নেমেছে।

রাডারে ধরা পড়া সংকেতে মনে হয়েছে, বিমানটি উড্ডয়নের পর কোনো কারণে কুয়ালালামপুরের দিকে ফিরে আসছিল। বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে সন্ত্রাসী কোনো কর্মকাণ্ডের যোগাযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চুরি যাওয়া ইউরোপীয় পাসপোর্ট নিয়ে দুজন যাত্রীর ভ্রমণ করার তথ্য পাওয়া যাওয়ায় সেদিকে ইঙ্গিত করছেন অনেকে। সন্দেহভাজন ওই দুজন যাত্রীর ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তাঁরা কয়েক বছর আগে থাইল্যান্ডে চুরি যাওয়া ইতালি ও অস্ট্রিয়ার দুটি পাসপোর্ট ব্যবহার করে ওই ফ্লাইটের যাত্রী হয়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া সন্দেহভাজন আরও দুই যাত্রীর ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা জানান, বিমানটির ভাগ্যে আসলে কী ঘটেছে, সেই রহস্যের জট খুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো। ২২৭ জন যাত্রী ও ১২ জন ক্রু নিয়ে উড়োজাহাজটি গত শুক্রবার মধ্যরাতের পর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে চীনের বেইজিংয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এর এক ঘণ্টা পর গ্রিনিচ মান সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটার (স্থানীয় সময় শনিবার রাত দেড়টা) পর রাডারের সঙ্গে এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। ঘটনার সময় এটি ভিয়েতনামের দক্ষিণ এলাকায় জলসীমার ওপরে ছিল।

উড়োজাহাজটি নিখোঁজ হওয়ার পেছনে সন্ত্রাসবাদী কোনো সংগঠনের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বলেন, ‘আমরা সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছি। তবে এখনই কোনো চূড়ান্ত মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’ দেশটির বেসামরিক বিমান পরিচালনা কর্তৃপক্ষের প্রধান আজহারউদ্দিন আবদুল রহমান গতকাল কুয়ালালামপুরে সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিমানের ওই ফ্লাইটে যাওয়ার জন্য পাঁচজন টিকিট কেটেও শেষ পর্যন্ত তাঁরা এতে চড়েননি।

মালয়েশিয়ার বিমানবাহিনীর প্রধান রদজালি দাউদ জানান, তদন্তকারীরা এখন একটি রাডার সংকেতের ওপরই বেশি নজর দিচ্ছেন। ওই সংকেতে উড়োজাহাজটি তার গতিপথের সামনে না গিয়ে একপর্যায়ে পেছনে ফিরে আসছিল, এমন ইঙ্গিত রয়েছে।

পরিবহনমন্ত্রী হিশামুদ্দিন হোসেন বলেন, উড়োজাহাজটির যাত্রীদের নামের তালিকায় অন্তত চারজন ‘সন্দেহভাজন’ ছিলেন। পরে অবশ্য তিনি দুজনের কথা বলেন। ওই দুজনের মধ্যে একজন জালিয়াতি করে ইতালির এবং আরেকজন অস্ট্রিয়ার পাসপোর্ট ব্যবহার করে একই সময়ে টিকিট কিনেছিলেন। তাঁদের টিকিট নম্বরও ছিল পাশাপাশি।

উড়োজাহাজটিতে ১৪টি দেশের নাগরিকেরা আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই ছিলেন চীনের নাগরিক। বাকিরা এশিয়া, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নাগরিক।

উড়োজাহাজটির ওই ফ্লাইটের সময় আবহাওয়া খারাপ ছিল, এমন কোনো ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে উড়োজাহাজটি থেকে উদ্ধারের আবেদন জানিয়ে বার্তা পাঠানোর কথা। তেমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি। দক্ষিণ চীন সাগরের যে স্থানের আকাশে বিমানটির সর্বশেষ অবস্থান জানা গিয়েছিল, ভিয়েতনামের নৌবাহিনীর জাহাজ তার আশপাশে পানির ওপরে তেলের আস্তরণ দেখেছিল। এ ছাড়া ধ্বংসাবশেষের আর কোনো আলামত মেলেনি।

কিছু ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার দাবি?: গতকাল রাতে সর্বশেষ পাওয়া খবরে বলা হয়, নিখোঁজ উড়োজাহাজটির কিছু ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার দাবি করেছে ভিয়েতনামের একটি অনুসন্ধান দল। তারা বলছে, ভিয়েতনামের থো চু দ্বীপের কাছে পাওয়া ধ্বংসাবশেষগুলো নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটিরই অংশ। ভিয়েতনামের ন্যাশনাল কমিটি ফর সার্চ অ্যান্ড রেসকিউয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে বলেন, থো চু দ্বীপ থেকে ৫০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে তাঁরা দুটি অংশ পাওয়ার কথা জানতে পেরেছেন। তবে রাত হয়ে যাওয়ায় আর তল্লাশি চালানো সম্ভব হয়নি। আজ সোমবার দিনের বেলায় ভালোভাবে খোঁজ করতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ