রাকসু নির্বাচন ১৬ অক্টোবর

নিজস্ব প্রতিবেদক (রাজশাহী), এবিসি নিউজ, (২২ সেপ্টেম্বর) : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (রাকসু) হল সংসদ এবং সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের নতুন তারিখ ১৬ অক্টোবর নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় জরুরি মিটিংয়ে বসে নির্বাচন কমিশন। প্রায় আড়াই ঘন্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এদিকে মিটিংয়ে বসার পর থেকে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির এবং বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীরা। শিবির মনোনীত প্যানেলের দাবি ছিল- ২৫ তারিখেই রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে।

অন্যদিকে ছাত্রদলসহ অন্তত ৫টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীরা নির্বাচন পেছানোর দাবি জানায়। একপর্যায়ে দুপক্ষের শিক্ষার্থীরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে দিতে মুখোমুখি অবস্থায় গেলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

এরই মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় অনলাইনে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রাকসু নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘রাকসু নির্বাচন কমিশন ২০২৫ এর পূর্ণাঙ্গ সভায় আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট এ ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনপূর্ব উদ্ভুত পরিস্থিতি সার্বিকভাবে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়। এ সভা লক্ষ্য করে যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজমান পরিস্থিতি কোনো অবস্থাতেই রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূলে নয়।’

তারা কারণ হিসেবে দুটি বিষয় উল্লেখ করেছেন সেগুলো হলো:

১. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঘোষিত চলমান ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি।

২. নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘উদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনায় রাকসু নির্বাচন উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার স্বার্থে কমিশন আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে আগামী ১৬ অক্টোবর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

এদিকে রাকসু নির্বাচন পেছানোর প্রতিবাদে কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনেই বিক্ষোভ করছে শাখা ইসলামি ছাত্রশিবির।

নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করে, ‘শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও রাকসুর ভিপি পদপ্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, আমরা প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত মানি না। এ প্রশাসনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। যখন তারিখ পেছানো হয় তখন শিক্ষার্থীরা নির্বাচনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। আমরা চাই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হোক কিন্তু এই প্রশাসন নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’

সার্বিক বিষয়ে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাকসু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয় তাই নির্বাচন কমিশন দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা (ছাত্রশিবির) মানছে না কিন্তু মানতে হবে। ক্যাম্পাসের এই অবস্থায় শিক্ষার্থীরা চলে গেছে। এখন নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।’

এদিকে সোমবার দুপুরে শাখা ছাত্রদলসহ ৫টি প্যানেল সংবাদ সম্মেলন করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রাকসু নির্বাচন পেছানোর দাবি জানান। কিন্তু ভিন্নমত জানায় ছাত্রশিবির। বিকেল ৩টার সময় শাখা ইসলামি ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও ভিপি পদপ্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ সাংবাদিকদের বলেন নির্বাচন ২৫ সেপ্টেম্বরই হতে হবে। রাকসু বানচালের যে অপচেষ্টা করা হচ্ছে সেটা বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।

জামায়াত পন্থী শিক্ষকদের কর্মসূচি প্রত্যাহার

সোমবার বিকেল ৫টার সময় ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা। তারা রাকসু নির্বাচনের অফিসিয়াল কাজে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানান।

দিনব্যাপী কমপ্লিট শাটডাউন, অব্যাহত থাকবে 

সোমবার সকাল থেকে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাট ডাউন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ কর্মসূচির কারণে বন্ধ ছিল ক্লাস-পরীক্ষা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম। এই কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় অফির্সাস সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন। তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত আমরা আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা এবং লাঞ্চিত হওয়ার বিচার না পাবো ততোক্ষণ আমাদের এই কমপ্লিট শাট ডাউন চলবে। রাকসুর সাথে আমাদের কোনো লেনাদেনা নেই। আমরা আমাদের দাবির বাস্তবায়ন চাই।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ