দলীয়করণ বন্ধ হয়নি, রূপ পাল্টেছে : ড. ইফতেখারুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসি নিউজ, (১৯ সেপ্টেম্বর) : রাজনৈতিক দল ও আমলাতন্ত্রে দলীয়করণের রূপ পাল্টেছে, বন্ধ হয়নি- এমন মন্তব্য করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পরও বৈষম্যবিরোধী চেতনার বাস্তবায়ন হয়নি, অতীতেও এমন ঘটনা বিরল। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।’

শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জন্য Training on Election Reporting বিষয়ক দুদিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্‌বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচন কমিশন মুখ্য ভূমিকায় থাকলেও রাজনৈতিক দল, আমলাতন্ত্র ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা- এই তিন শক্তি নির্বাচনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই তিন শক্তির টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েই নির্বাচনের পুরো কাজ চলে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত ৫৪ বছর ধরেই দলীয়করণের কারণে নানামুখী সমস্যার মধ্য দিয়ে দেশ চলছে। সব ধরনের দুর্বলতার কথা বিবেচনায় রেখেই নির্বাচনের কাজ করতে হবে। পাশাপাশি কোথায় বিচ্যুতি হচ্ছে সেটাও মাথায় রাখতে হবে। সংস্কার কমিশনের কাছে সে বিষয়ে অনেক প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিকরণ ও প্রতিষ্ঠান দুর্বল করণের মধ্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রশাসনের পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতা নষ্ট হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে একটি দলীয় প্রভাবকে আরেকটি দলীয় প্রভাব দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তবে প্রশাসনে এখনও কিছু কর্মকর্তা আছেন যারা নিরপেক্ষ থেকে পেশাগতভাবে কাজ করার চেষ্টা করছেন। তার মতে, প্রশাসনে এখন তিন ধরনের শক্তি সক্রিয়- একদলীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী, প্রতিস্থাপিত দলীয় গোষ্ঠী এবং নিরপেক্ষ থাকতে চাওয়া একটি ছোট পেশাজীবী গোষ্ঠী। নির্বাচন এই টানাপোড়েনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে পুরো প্রশাসন পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা ও পেশাদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে। সংস্কার কমিশনগুলোর দেওয়া সুপারিশ এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। অল্প কিছু অগ্রগতি হলেও তা যথেষ্ট নয়। তবে এসব দুর্বলতা মাথায় রেখেই সাংবাদিকদের কাজ করতে হবে। কোথায় আইন প্রয়োগ হচ্ছে, কোথায় ভোটারদের অধিকার নিশ্চিত হচ্ছে এবং কোথায় ব্যর্থতা ঘটছে- সেগুলো তুলে ধরা সাংবাদিকদের দায়িত্ব।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘নির্বাচনসংক্রান্ত আইন ও নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনা হলেও প্রত্যাশিত সংস্কার এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। বিশেষ করে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে যে শর্ত আরোপ করা হয়েছে, তা ঝুঁকি তৈরি করছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশাধিকার অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের আগে সাংবাদিকদের ‘অবহিত করার’ যে বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে, সেটি হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।’

একই সঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের মনে করিয়ে দেন, এটি তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। একইসঙ্গে এটি তাদের আইনগত অধিকার ও কর্তব্য।

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি নিরপেক্ষভাবে, সত্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করি এবং স্বচ্ছতার দাবি অব্যাহত রাখি, তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আনার সুযোগ তৈরি করা সম্ভব।’

রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) এবং টিআইবির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সংশ্লিষ্ট বিটের অর্ধশত সাংবাদিক অংশ নিয়েছেন। উদ্‌বোধনী অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী, আরএফইডি সভাপতি কাজী জেবেল, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ টিআইবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ