হাসিনাকে যেতেই হবে
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকে না মানার কথা আবার জানিয়ে খালেদা জিয়া একতরফা নির্বাচনের যে কোনো চেষ্টা রুখতে নেতা-কর্মীদের তৈরি থাকতে বলেছেন।
মঙ্গলবার রাতে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে বিএনপির রংপুর বিভাগের একদল নেতা-কর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন এই আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়া বলেন, “আমরা স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে যেতেই হবে। তারা (সরকার) যত জোর গলায় বলুক না কেন, তাদের অধীনে নির্বাচন হবে না, হবে না, হবে না।”
সংবিধান সংশোধনের ফলে এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নির্বাচন হবে। তবে এতে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না বলে বিএনপির আপত্তি রয়েছে।
তারা নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে এলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, সংবিধান মতে ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম সাধারণ নির্বাচন হবে।
নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজনে সরকারকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “আমরা ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেখব। একতরফা নির্বাচন করার চেষ্টা হলে জনগণকে নিয়ে প্রতিহত করা হবে।”
নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কীভাবে প্রতিহত করব, তা সময়মতো জানাব।”
খালেদা জিয়া বলেন, “নির্দলীয় সরকারের আন্দোলন শেখ হাসিনাই করেছিলেন, ওই সময়ও তো সংবিধান ছিল। কিন্তু তিনি ১৭৩ দিন হরতালসহ সহিংস ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। এজন্য আমরা সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংযোজন করেছিলাম।
“প্রধানমন্ত্রী এখন সংবিধানের দোহাই দেন। ২০০৬ সালে সংবিধান অনুযায়ী সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের দায়িত্ব পাওয়ার কথা ছিল। তাকে শেখ হাসিনা মানেননি। তাহলে এখন আমরা শেখ হাসিনাকে মানব কেন?”
বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে সরকারের ‘আজ্ঞাবহ’ প্রতিষ্ঠান অভিহিত করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “বর্তমান ভোটার তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। এই তালিকায় অনেক গণ্ডগোল আছে। এই তালিকা রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
রংপুর বিভাগের ৮ জেলার শতাধিক নেতা-কর্মী এই সভায় অংশ নেন। সভার শুরুতে রংপুরের জনসভার দিন সংঘটিত সড়ক দুঘর্টনায় বদরগঞ্জের নিহত দুই কর্মী আবেদ আলী মন্ডল ও বুলবুল আহমদের পরিবারকে অর্থ সহায়তা করেন খালেদা জিয়া।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর রংপুরে খালেদা জিয়ার জনসভা থেকে ফেরার পথে এই দুই কর্মী নিহত হন।
রংপুরে দলকে শক্তিশালী করতে জেলা নেতাদের নির্দেশনা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “সৎ ও ভালো রাজনীতিবিদদের দলে নিয়ে আসতে হবে। আমরা নতুন ধারার রাজনীতি ও আগামীতে নতুন ধারার সরকার গঠন করব।”
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “শুনেছি বিজিবিকে আমাদের আন্দোলন দমনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। তারা সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব বাদ দিয়েছে। এখন সেই সীমান্তের দায়িত্ব অন্যদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
“তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোয় বিএসএফ সদস্যরা থাকেন, অথচ সরকারের সেদিকে চোখ নেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের স্বাধীনতা থাকবে না।”
হল-মার্ক, ডেসটিনি, পুঁজিবাজার ও পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি নিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “এরা চোর নয়, মহাচোর। তারা ক্ষমতায় থাকলে দেশ শেষ হয়ে যাবে।”
সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, রংপুর জেলা আহবায়ক মোজাফফর হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক পরিতোষ চক্রবর্তী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে দলের রংপুর জেলা যুগ্ম আহবায়ক শিরিন ভরসা, দিনাজপুরের সভাপতি আখতারুজ্জামান মিয়া, পঞ্চগড়ের সভাপতি মোজাহের আলী, নীলফামারীর সভাপতি আলমগীর সরকার, সৈয়দপুর উপজেলা সভাপতি আমজাদ আলী সরকার, কুড়িগ্রামের সভাপতি তাসভীর উল ইসলাম, লালমনিরহাটের সভাপতি হাফিজুর রহমান বাবলা, গাইবান্ধার সভাপতি আনিসুজ্জামান খান বাবু, সাবেক সাংসদ বিলকিস ইসলাম, রোজিনা ইসলাম, কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলরার দলীয় কার্যালয়ে জিয়া পরিষদের নেতা অধ্যাপক হারুনর রশীদ খান সম্পাদিত ও বিএনপির প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শরীফ শাহ কামাল তাজের প্রকাশনায় ‘কোন দিকে যাচ্ছে দেশ’ ও ‘জিয়া থেকে তারেক জিয়া’ শীর্ষক দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন বিরোধীদলীয় নেতা।