দুদিনের বৃষ্টিতে ডুবেছে রাজধানী, উদ্যোগ শুধু ঘোষণা আর কাগজে-কলমে
বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (২১ জুলাই ২০২০) : গতকাল সোমবারের পর আজও সকাল থেকে মুষলধরে বৃষ্টি হয়েছে রাজধানীতে। দু’দিনের এই বৃষ্টিতে ওলিগলিসহ ডুবে গেছে রাজপথ। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে বৃষ্টির পানি সড়ক পেরিয়ে ঢুকে পড়েছে বিপনী-বিতানগুলোতেও। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ঢাকা শহর। স্থবির হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবন-যাত্রাও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা শহরের সবচেয়ে সমন্বয়হীন অবহেলিত একটি খাত হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসন। ছয়টি সংস্থা ও বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ হওয়ার কথা। কিন্তু সংস্থাগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। এক প্রতিষ্ঠান আরেক প্রতিষ্ঠানের ওপর দায় চাপায়।
নিকট অতীতে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা হয়েছিল ২০১৭ সালে। ওই সময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ওয়াদা করে বলেছিলেন, ‘আমি প্রমিজ করছি, সামনের বছর থেকে আর এসব (জলাবদ্ধতা) দেখবেন না। কিছুদিনের মধ্যেই নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।’
এই ওয়াদা পালনের জন্য ঢাকার সব খাল, নালাসহ বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনে জড়িত সবকিছুর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তার প্রায় আড়াই বছর পর গত ফেব্রুয়ারিতে আগের মন্ত্রীর উত্তরসূরি ও বর্তমান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বক্স কালভার্টের ভেতর হাজার হাজার টন বর্জ্য জমে আছে। খালগুলোতে প্রবাহ নেই, নদীগুলো দখল হয়ে গেছে।’
গতকাল যোগাযোগ করা হলে তাজুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, ঢাকার সব খাল পরিষ্কার করার কাজে তাঁরা হাত দিয়েছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে কাজের গতি কমে যাওয়ায় সব খাল পরিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। তাহলে জলাবদ্ধতা সমস্যার কোনো সমাধান নেই? জবাবে মন্ত্রী আগের মতোই বলেন, বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ ও ধলেশ্বরী খনন করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকার ৩৯টি খাল পুনঃখনন করা হবে। এসব কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতার সমস্যা কমে আসবে।
২০১৭ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে ঢাকা ওয়াসা অন্তত ১০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। সিটি করপোরেশনসহ অন্য সংস্থাগুলোর পৃথক ড্রেনেজ বিভাগ না থাকায় সংস্থাগুলো এই সময়ে পানিনিষ্কাশনের জন্য মোট কত টাকা খরচ করেছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
নগর–পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির জন্য মন্ত্রীসহ বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা যে আশ্বাস দেন, তার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। তাঁরা নিজেরাও জানেন না, ঢাকায় কত মিলিমিটার বৃষ্টি হলে কোন অংশে কতটুকু জলাবদ্ধতা হবে। এ থেকে রক্ষার জন্য তাঁরা সেভাবে কাজও করছেন না। বিভিন্ন সংস্থা বিচ্ছিন্নভাবে প্রকল্প নিয়ে যে কাজ করছে, তাতে শুধু জনগণের টাকাই নষ্ট হচ্ছে, প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকায় ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত হয়েছে ৬৩ মিলিমিটার। তিন ঘণ্টার এই বৃষ্টিতে মিরপুর রোড, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, নবোদয় হাউজিং, মগবাজার, গ্রিন রোড, বিমানবন্দর সড়ক, মিরপুর, মতিঝিল ও আরামবাগের বড় অংশ ডুবে যায়। পুরান ঢাকার বংশাল, নাজিরাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিল হাঁটুপানি। বিভিন্ন সড়কে বিকল হয়ে যায় বহু যানবাহন। কার্যত অচল হয়ে পড়ে ঢাকা।