অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দায়িত্ব সরকারের
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায় ভারত। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের জন্য ‘সহায়ক পরিবেশ’ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। আর বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে, সেটা ঠিক করবে এ দেশের জনগণ।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এই বার্তা দিয়ে গেছেন। সুষমা স্বরাজের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের আলোচনায় উপস্থিত রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে গতকাল সোমবার এ তথ্য জানা গেছে।
সুষমা স্বরাজ গত রোববার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির নেত্রীর সঙ্গে সুষমা স্বরাজের আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি প্রসঙ্গ।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনীতি, বিশেষ করে আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ‘বিশেষ মাত্রা’ অব্যাহত রাখার ব্যাপারে ভারতের অঙ্গীকারের কথা জানান সুষমা স্বরাজ।
নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশের একটি সরকারি সূত্র জানায়, বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত সব সময় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার পক্ষে। তাই ভারত যে বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়, সেটি সুষমা স্বরাজ বলেছেন। এ জন্য সব দলকে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারের দায়িত্বের কথা বলেছেন। আর নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির সময় সাবধানি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রসঙ্গটিও তিনি উল্লেখ করেছেন বলে জানা যায়।
রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সুষমা স্বরাজের সঙ্গে আলোচনায় খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনের প্রসঙ্গটি তুলেছেন। এ সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন কম, শুনেছেন বেশি। বিএনপির নেত্রী বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়ার প্রসঙ্গ তুললে সুষমা রাজনৈতিক পরিবেশের উন্নতির জন্য রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজসহ সব পক্ষকে একসঙ্গে দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার প্রসঙ্গটি আলোচনায় তোলেন বিএনপি নেত্রী। এ সময় সুষমা স্বরাজ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভারতের নির্বাচন পরিচালনার প্রসঙ্গ টানেন। তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনা করাকে ‘প্রক্রিয়ার বিচ্যুতি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। সুষমা স্বরাজ বলেছেন, বাংলাদেশে কীভাবে নির্বাচন হবে, সেটি ঠিক করবে এ দেশের জনগণ। তবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিকল্প নেই। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার অধীনে অংশ নেবে না বলেই বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল। আগামী নির্বাচনেও তাদের মূল দাবি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। কিন্তু আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই হতে হবে সুষমা স্বরাজও এমন ধারণা দিয়ে গেছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচনের বিষয়ে সুষমা স্বরাজ যা বলেছেন, আওয়ামী লীগের অবস্থানও তাই। ফলে সুষমা স্বরাজের অবস্থান সঠিক।’
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, সংবিধান অনুসারে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন—এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ কোনো ছাড় দেবে না। আর বিএনপি এই পদ্ধতিতে আগামী নির্বাচনে এলে ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক আছে, সেটা অনেকটা চাপা পড়ে যাবে। তবে বিএনপি চাইলে নির্বাচনী আইন কিংবা ছোটখাটো অন্য বিষয়ে ছাড় দিতে রাজি আছে।
নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে, তা ঠিক করবে বাংলাদেশের জনগণ
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠককে ইতিবাচকভাবে দেখছে বিএনপি। ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দুই দেশের টেকসই সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের জন্য প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচিত সরকার গুরুত্বপূর্ণ। এটা মাথায় রেখে বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল গত রোববার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে। এ সময় বিএনপি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে জোর করে ছুটিতে পাঠানোর বিষয়টিও তোলে। এর মাধ্যমে সরকার বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইছে বলে তাঁরা উল্লেখ করেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক বিএনপি নেতা জানান, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনেক দেশেই আছে। কিন্তু একটি সংসদ বহাল রেখে আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা যে নজিরবিহীন, সেটি তাঁরা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পরিষ্কার করে বলেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, একটা সংসদ বহাল রেখে আরেক সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের সংবিধানে ছিল না। গত নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকার সংবিধান সংশোধন করে এটা করেছে।
বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক অবিশ্বাস থেকে অতীতে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ প্রবর্তন হয়েছিল। বর্তমানে ক্ষমতাসীনদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই সরকারব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজন করা হয়েছিল। ক্ষমতাসীনেরা খারাপ অভিপ্রায়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ভারত সরকার ভালো করেই জানে আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে। তা ছাড়া গতবার যে আশা থেকে আওয়ামী লীগকে ভারত সমর্থন করেছিল, সেটি হয়নি। বরং বাংলাদেশের জনগণের কাছে ভারতের ব্যাপারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার কথা বলে ভারত বোঝাতে চাইছে কোনো বিশেষ দল নয়, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে তারা সুসম্পর্ক চায়।