অবহেলা হবে না নারীদের চিকিৎসায়

SheikhHasinaরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ পরিবারের নারী সদস্যদের সুস্বাস্থ্যের বিষয়ে সবাইকে আরো মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস উপলক্ষে এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বুধবার শেখ হাসিনা বলেন, “সিলেট ও চট্টগ্রামে সাধারণ একটা মানসিকতা আছে- মায়েরা হাসপাতালে যান না। সেখানে রক্ষণশীল পরিবারের সংখ্যা বেশি।

“আমি মনে করি, পুরুষ ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে ভাল ফল পাওয়া যাবে”, বলেন তিনি।নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় সাত হাজার চিকিৎসক, পাঁচ হাজার নার্স ও তিন হাজার মিডওয়াইফ নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে বিভিন্ন পর্যায়ে ইতোমধ্যে প্রায় ৮ হাজার জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

নার্স নিয়োগের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৬ বছর করার কথাও অনুষ্ঠানে জানান তিনি।

“এই সরকারের সময়ে মোট এক হাজার ৭৪৭ জন স্টাফ নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নার্সিং জনশক্তি বৃদ্ধির জন্য ১২টি ইনস্টিটিউট চালু হয়েছে। নার্সিং শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে সাতটি নার্সিং ইনস্টিটিউটকে কলেজে উন্নীত করা হয়েছে”, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুজিবুর রহমান ফকির মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হেলিকপ্টারের কথা বলেন।

এর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জরুরি চিকিৎসার নিশ্চিতে প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এরআগে, প্রধানমন্ত্রী সেবা প্রদানকারীদের উৎসাহিত করতে জরুরি প্রসূতি সেবা কাজে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ৪৮টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেন। প্রতিটি বিভাগ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের একটি করে প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেয়া হয়।

মায়েদের স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৯৭ সালের ২৮ মে ‘নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস’ পালনের ঘোষণা দেয়া হয়।

২০০৮ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৬ দশমিক ৮ বছর। তা থেকে বেড়ে বর্তমানে গড় আয়ু ৬৯ বছরে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যেসব সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত সূচক এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে সেগুলো হলো- জন্মহার হ্রাস, বিয়ের বয়স বৃদ্ধি, নারী শিক্ষার বিস্তার, জরুরি প্রসূতি সেবার সম্প্রসারণ, নারীর ক্ষমতায়ন, যোগাযোগের উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন।”

২০১৫ সালের আগেই অতি দরিদ্রের সংখ্যা কমিয়ে আনার মাধ্যমে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি-১ ) অর্জনের জন্য গত ১৬ জুন জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশকে পুরস্কৃত করার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “অনুষ্ঠানে আমার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি যেতে পারিনি। খাদ্যমন্ত্রী গেছেন। তিনি আমার পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন।”

এখন প্রতি এক লাখ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ১৯৪ জন মায়ের মৃত্যু হয়। আর প্রতি হাজারে নবজাতকের মৃত্যু হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু প্রতি এক লাখ সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে ১৪৩ জন এবং নবজাতকের মৃত্যু প্রতি হাজারে ২০ জন এবং দক্ষ হাতে প্রসবের হার ৫০ ভাগে উন্নীত করতে হবে।

এর আগে শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এমডিজি-৪ এবং সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বাংলাদেশ।

মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য জরুরি প্রসূতি সেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে। বর্তমানে সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ৫৯টি জেলা হাসপাতাল, ১৩২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ৬৮টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে জরুরি প্রসূতি সেবা কার্যক্রম চলছে।

মাতৃস্বাস্থ্য রক্ষা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাসে উন্নীত করার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “শিশু যেনো শক্ত খাবার খাওয়ার আগ পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করতে পারে।”

এই সরকারের সময়ে স্বাস্থ্যখাতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার চালু হয়েছে। বর্তমানে ৮টি হাসপাতালে উন্নতমানের টেলিমেডিসিন সেবা দেয়া হচ্ছে। আরো ১০টি হাসপাতালে এ কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হবে বলে শেখ হাসিনা জানান।

স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রসূতি মায়েরা ফোনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারছেন।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রহুল হক জানান, ১৬২২৭ নম্বরে ফোন করে প্রসূতি মায়েরা চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, হত দরিদ্র মায়েদের গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিম’ চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ৫৩টি উপজেলায় এ কার্যক্রম চলছে। আরো ২০টি উপজেলায় এ কর্মসূচি সম্প্রসারণের উদ্যোগ ইতিমধ্যে নেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ২০টি করে উপজেলা এ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এন নিয়াজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম আমির হোসেন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার সেফায়েত উল্লাহ বক্তব্য দেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ