শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: জিম্বাবুয়ের কাছে কখনোই দেশের মাটিতে হারেনি শ্রীলঙ্কা। জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটের যখন ‘স্বর্ণসময়’—ফ্লাওয়ার ভাইদের সময় তারা যখন বড় দলগুলোর জন্য ‘হুমকি’ হয়ে উঠছে, তখনো দেশের মাটিতে তাদের কাছে হারার দুর্ভাগ্য বরণ করতে হয়নি ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপ বিজয়ী দলটির। কিন্তু সেই জিম্বাবুয়ে যখন সব হারিয়ে নিঃস্ব, আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ডের মতো দেশগুলোও যখন তাদের পাত্তা দিতে চায় না, তখনই কিনা দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের কাছে হারল শ্রীলঙ্কা! লঙ্কান ইংরেজি দৈনিক দ্য আইল্যান্ড এই সময়টাকে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন’ সময় বলছে। পত্রিকাটির মতে, ‘মাত্রাতিরিক্ত রাজনীতিকরণ’ শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটকে এই পর্যায়ে নিয়ে ফেলেছে।
গতকাল ডাম্বুলায় ৩১৬ রান করেও জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে শ্রীলঙ্কা। যে হার ২০১৯ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার সরাসরি অংশগ্রহণ ফেলে দিয়েছে খানিকটা অনিশ্চয়তার মধ্যে। যে জয়ে শ্রীলঙ্কার মাঠে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটাও নিজেদের করে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে।
আইল্যান্ড এই হারের পর প্রশ্ন তুলেছে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে মাত্রাতিরিক্ত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে। লিখেছে, সম্প্রতি দল নির্বাচন নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। আইল্যান্ডের ভাষায়, লঙ্কান ক্রিকেটারদের শৃঙ্খলার মানও নাকি ক্রমে নিচের দিকে নামছে।
সনৎ জয়াসুরিয়ার নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটির মেয়াদ বাড়ানোরও সমালোচনা করেছে দ্য আইল্যান্ড। পত্রিকাটির ভাষায়, ‘১২ মাস ধরে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট যে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সে হিসেবে সনৎ জয়াসুরিয়ার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচক কমিটিকে বিদায় জানিয়ে দেওয়াই উচিত ছিল। অথচ এই নির্বাচক কমিটির মেয়াদ বাড়ালেন ক্রীড়ামন্ত্রী দয়াসিরি জয়াসেকেরা।’ গতকালই জয়াসুরিয়ার নির্বাচক কমিটির মেয়াদ বাড়িয়েছেন দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রী। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নির্বাচকদের কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে পত্রিকাটি।
আকিলা ধনঞ্জয়কে কেন নেওয়া হয়েছে, সেটি বুঝতে পারছে না আইল্যান্ড। তারা লিখেছে, পাঁচ বছর ধরে এই ধনঞ্জয় জাতীয় দলের ধারে–কাছেও ছিলেন না। ঘরোয়া ক্রিকেটে যে খেলোয়াড়ের বোলিং গড় ৩০, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রহস্যজনকভাবে দলে নেওয়া হয়েছে তাঁকেই। ডাম্বুলার ম্যাচে তিনি ওভারপ্রতি ৬ রান করে দিয়েছেন। জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যানরা তাঁকে খুব সহজেই খেলেছেন। যখন ইচ্ছা সুইপ করেছেন, রিভার্স সুইপও করেছেন যখন-তখন। কয়েক মাস ধরে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে যে বারবার প্রশ্ন উঠছে, ধনঞ্জয়ের অন্তর্ভুক্তি সেগুলোর একটি।
৩১৬ রানের জবাবে ৪৬ রানেই জিম্বাবুয়ের ২ উইকেট ফেলে দেওয়া গিয়েছিল। কিন্তু তারপরও পারেনি শ্রীলঙ্কা। সলোমন মায়ার ও শন উইলিয়ামসনের ১৬১ রানের জুটিই ম্যাচে ফেরায় জিম্বাবুয়েকে। ম্যাচটা এত সহজে জিম্বাবুয়ে জিতে গেল যে লঙ্কানদের বোলিং শক্তি নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়।
অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস দোষ দিচ্ছেন ওই বোলিং-ফিল্ডিংকেই, ‘বোলারদের বাজে বোলিং আর যাচ্ছেতাই ফিল্ডিং আরও একবার আমাদের ডোবাল। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমরা ক্যাচ ফেলেছি। আমরা গত কয়েক দিন ফিল্ডিং নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছি। কিন্তু ম্যাচে আসল সময়ে এসে সব গুলিয়ে ফেলছি।’
গত এক বছরে শ্রীলঙ্কার সাফল্য বলতে জিম্বাবুয়েতে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ জেতা। জিম্বাবুয়ে আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল সে সিরিজে ম্যাথুসদের প্রতিপক্ষ। এ ছাড়া গত এক বছরে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তারা হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ওয়ানডে সিরিজ এসেছে ৪-১ ব্যবধানে। ঘরের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষেও সিরিজ জিততে পারেনি শ্রীলঙ্কা। টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি তিন সিরিজই ড্র হয়েছে ১-১ ব্যবধানে।

Leave a Reply

Facebook
%d bloggers like this:
ব্রেকিং নিউজ